সাকিবের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন, বাংলাদেশের সহজ জয়

ক্রীড়া ডেস্ক: আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই বল হাতে জ্বলে ওঠেন সাকিব আল হাসান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন তিনি। এদিকে অভিষেকে নিজেকে চেনান পেসার হাসান মাহমুদ। শেষ পর্যন্ত তাদের নৈপুণ্যে বাংলাদেশ পেয়ে যায় মামুলি লক্ষ্য। রান তাড়া করতে নেমে তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাসের ব্যাটে ভালো শুরু পায় স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দৃঢ়তায় ৬ উইকেটে জিতে যায় টিম টাইগার্স। এরফলে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা।

বুধবার ফুলেল মঞ্চে দাঁড়িয়ে সিরিজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিসিবি সভাপতি। মাঠের নানা প্রান্ত থেকে ওড়ানো হলো বেলুন। আতশবাজির স্ফুলিঙ্গের ছটায় শুরু হয় ম্যাচ। কিন্তু উৎসবের সব রং কেড়ে নেন সাকিব আল হাসান ও হাসান মাহমুদ। তাদের বোলিং তোপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় মাত্র ১২২ রানে। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ৩৩.৫  ওভারে ৬ উইকেট হাতে রেখে।

২০১৯ বিশ্বকাপের পর প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে সাকিবের শিকার করেন ৪ উইকেট। ৭.২ ওভারে মাত্র ৮ রান দেন তিনি। অভিষেক রাঙিয়ে তরুণ পেসার হাসান ১৮ রানে নেন ৩ উইকেট। ২ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি মোস্তাফিজুর রহমানও বোলিং করেন দারুণ।

সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অভিষেক হয়েছে ৬ জনের। আর বাংলাদেশের একজনের। সব মিলিয়ে এক ৭ জনের অভিষেক। ক্রিকেট ইতিহাসে যা অন্যরকম এক ঘটনায়।

বুধবার দেশের ৩৪তম অধিনায়ক হিসেবে আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু করেন তামিম ইকবাল। টস ভাগ্যে জিতে নেন ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত। তবে  শুরুতে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচের প্রথম ওভারেই রুবেল হোসেনের শর্ট বলে পুল করে ছক্কায় ওড়ান সুনিল আমব্রিস। তবে পরের ওভারেই আমব্রিসকে ফিরিয়ে দেন মোস্তাফিজ। তৃতীয় ওভারে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে ঘণ্টাখানেক সময়। বৃষ্টির পর আবার মোস্তাফিজের ছোবল। অভিষিক্ত কিপার-ব্যাটসম্যান জশুয়া দা সিলভা ফেরেন গালিতে লিটন দাসের দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচে। এদিকে সাকিব আক্রমণে আসার পর দিশাহারা হয়ে পড়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। এ বাঁহাতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেরান আন্দ্রে ম্যাককার্থিকে বোল্ড করে। আর সফরকারী অধিনায়ক জেসন মোহাম্মেদ স্টাম্পড হন ডিফেন্স করার চেষ্টায়। এদিকে সোজা বলে এলবিডব্লিউ এনক্রমা বনার। ওই ওভার শেষে সাকিবের বোলিং ফিগার ছিল ৫-১-৫-৩!

সাকিবের ঘূর্নিতে একটা সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ৫৬। সেখান থেকে দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন কাইল মেয়ার্স ও রভম্যান পাওয়েল। এই জুটির ৫০ রান আসে ৫১ বলে। তবে তাদের পথচলা দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসেই থামিয়ে দেন অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ। অফ স্টাম্প ঘেষা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে পাওয়েলকে (২৮) ফিরিয়ে ভাঙেন ৫৯ রানের জুটি। পরের বলেই এলবিডব্লিউ রেমন রিফার।

পরের ওভারে আরেকটি বড় ধাক্কা খায় ক্যারিবিয়ানরা। তাদের আশা হয়ে থাকা মেয়ার্সকে ৪০ রানে থামান মেহেদী হাসান মিরাজ। এদিকে আকিল হোসেনকে ফিরিয়ে হাসান ধরেন তৃতীয় শিকার। সাকিব বোলিংয়ে ফিরে আল জারি জোসেফকে বোল্ড করে শেষ করে দেন ইনিংস। যে কারণে সহজ লক্ষ্য পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

সহজ লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই সাবধানী ছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস। ১৩.২ ওভারে তারা দলীয় স্কোর বোর্ডে যোগ করেন ৪৭ রান। যে কারণে মনে হয়েছিল সহজেই জিতে যাবে স্বাগতিকরা। কিন্তু এরপরই টাইগারদের চেপে ধরেন সফরকারী দলের দুই স্পিন আকিল হোসেন ও অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ। তাইতো বোল্ড হতে বাধ্য হন লিটন। আকিলের মিডল স্টাম্পে পড়া গুড লেংথের লাইন বল ঠিক মত খেলতে পারেননি। যে কারণে উইকেট দিয়ে ফেরেন লিটন। তার আগে তিনি করেন ৩৮ বলে ২ চারে ১৪। এর কিছুক্ষণ পরেই তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরে যান সেই আকিলের বলে। এবার এ বাঁহাতি অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা বল লেগে খেলতে গিয়ে মিড-উইকেটে ধরা পড়েন।

নাজমুল ফিরলেও বাংলাদেশকে পথ হারাতে দেননি তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। তৃতীয় উইকেটে তারা বেশ ধীরেই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু জেসন মোহাম্মদ তাদের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ান ইনিংসের ২৩তম ওভারের ৫ম বলে। সে সময় দারুণ এক বলে তামিমকে স্টাম্পড করে ফেরান তিনি। ফেরার আগে তামিম করেন ৭ চারে ৪৪ রান। তবে এক প্রান্ত আগলে সাকিব খেলছিলেন বেশ। দলকে জয়ের খুব কাছেই পৌঁছে দিযেছিলেন। কিন্তু নিজের ইনিংস শেষ করতে পারেননি। আকিল হোসেনের বলে ১৯ রান করে বোল্ড হয়ে ফেরেন। তবে এরপর আর টাইগারদের কোন উইকেট হারাতে দেননি মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তারা অনেকটা দেখে শুনে খেলে ৩৬ বলে ২০ রানের জুটি গড়ে দলকে জিতিয়ে ফেরেন। মুশফিক ১৯ ও মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ৯ রানে।

বল হাতে ৮ রানে ৪ উইকেট ও ব্যাট হাতে মূল্যবান ১৯ রান করার ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান। শুক্রবার একই ভেন্যুতে হবে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যেকার দ্বিতীয় ওয়ানেডে। এ ম্যাচ জিতলেই সিরিজ নিজেদের করে নেবে টিম টাইগার। এখন ঐ ম্যাচেই চোখ তামিমদের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩২.২ ওভারে ১২২ (আমব্রিস ৭, যশুয়া ৯, ম্যাককার্থি ১২, মোহাম্মেদ ১৭, মেয়ার্স ৪০, বনার ০, পাওয়েল ২৮, রিফার ০, জোসেফ ৪, আকিল ১, হোল্ডার ০*; রুবেল ৬-০-৩৪-০, মোস্তাফিজ ৬-০-২০-২, হাসান ৬-১-২৮-৩, সাকিব ৭.২-২-৮-৪, মিরাজ ৭-১-২৯-১)

বাংলাদেশ: ৩৩.৫ ওভারে ১২৫/৪ (লিটন ১৪, তামিম ৪৪, শান্ত ১, সাকিব ১৯, মুশফিক ১৯*, মাহমুদউল্লাহ ৯*; জোসেফ ৮-৩-১৭-০, হোল্ডার ৩-০-২৬-০, আকিল ১০-১-২৬-৩, মোহাম্মদ ৮-০-১৯-১, ম্যাককার্থি ২-০-১০-০, বনার ২.৫-০-১৫-০)

ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০