অবৈধভাবে রেয়াত নেয় আবুল খায়ের গ্রুপের ‘দুই প্রতিষ্ঠান’

রহমত রহমান: দেশের বড় শিল্পগোষ্ঠীর একটি হচ্ছে আবুল খায়ের গ্রুপ। এ গ্রুপের দুটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে রেয়াত নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মূলত রাজস্ব ফাঁকি দিতে দুটি প্রতিষ্ঠান বিধিবহির্ভূতভাবে রেয়াত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো আবুল খায়ের কনজিউমার প্রোডাক্টস লিমিটেড ও আবুল খায়ের কনডেন্সড মিল্ক অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। রাজস্ব অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষায় বিষয়টি উঠে এসেছে। ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) প্রতিবেদন দিয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) আবু সাঈদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন দেয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গ্রুপের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রেয়াত নেয়া, সমন্বয়, অতিরিক্ত গ্রহণ এসব স্বাভাবিক বিষয়। আর রেয়াত নেয়ার আগে ভ্যাট অফিস কিছু বলে না, নেয়ার পর বলে অবৈধ। যেহেতু অভিযোগ হয়েছে, আমরা এ বিষয়টি দেখব।’

সূত্র জানায়, সম্প্রতি এনবিআরের অধীন ৫টি কমিশনারেটের ১৯টি সার্কেল অফিসের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের ওপর কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষা পরিচালনা করে রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর। নিরীক্ষায় অতিরিক্ত, বিধিবহির্ভূত, অনিয়মিতভাবে রেয়াত গ্রহণ, উৎসে কর, সুরক্ষা চার্জ আদায় না করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম উঠে আসে। নিরীক্ষা শেষে সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দেয়া হয়।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন নাসিরাবাদ সার্কেলে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের কনজিউমার প্রোডাক্টস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮-১৯ অর্থবছর বিধিবহির্ভূতভাবে রেয়াত নিয়েছে। উপকরণ (চা পাতা) মূল্য সাড়ে ৭ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও নতুন করে মূল্য ঘোষণা না দিয়ে বর্ধিত মূল্যের ওপর রেয়াত গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে মোট ৮০ লাখ ২৫ হাজার ১৬০ টাকা বিধিবহির্ভূতভাবে রেয়াত গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ২৭ নভেম্বর ৭৪ হাজার ৮৭৫ কেজি চা পাতার (ব্ল্যাক টি) বিপরীতে অতিরিক্ত রেয়াত নিয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৫ টাকা। এছাড়া একই বছরের ২০ নভেম্বর ২৫ হাজার ২৫ কেজি চা পাতার বিপরীতে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭১ টাকা, একই দিন ৭৫ হাজার ৭৫ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৭ লাখ ১ হাজার ১৩ টাকা, ২৯ নভেম্বর ২৫ হাজার ২৫ কেজি চা পাতার বিপরীতে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭১ টাকা, ৯ ডিসেম্বর ২৫ হাজার ২৫ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪১২ টাকা, একইদিন ১ লাখ ১০০ কেজি চা পাতার বিপরীতে ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪৪ টাকা, ৮ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৯৭৩ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৪৩ হাজার ৮১ টাকা, একইদিন ১০ হাজার ৯৭৮ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৪৩ হাজার ১০৩ টাকা, ৫ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৯৭৩ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৫৩ হাজার ৬৮৮ টাকা, একইদিন ১০ হাজার ৯৭৮ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৫৩ হাজার ৭১০ টাকা ও ১৩ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৯৭৪ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৪৩ হাজার ৮৩ টাকা।

একইভাবে ১৩ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৯৭৯ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৪৩ হাজার ৯৯ টাকা, ১৭ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৯৮১ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৫২ হাজার ৬৪২ টাকা, একইদিন ১০ হাজার ৯৭৩ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৫৪ হাজার ২৬২ টাকা, একইদিন ১০ হাজার ৯৭৫ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৫২ হাজার ৩৪১ টাকা, ২ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৯৭৯ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৫৩ হাজার ৭১৯ টাকা, ৩০ অক্টোবর ৭৫ হাজার ৭৫ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩৬ টাকা, একইদিন ৫০ হাজার ৫০ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ২১৬ টাকা, ৭ নভেম্বর ৭৫ হাজার কেজি চা পাতার বিপরীতে ৭ লাখ ৩৯৯ টাকা, একইদিন ৫০ হাজার কেজি চা পাতার বিপরীতে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬৫ টাকা, ৮ নভেম্বর ৫০ হাজার ৫০ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩১৯ টাকা, ১৫ নভেম্বর ৫০ হাজার কেজি চা পাতার বিপরীতে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩৩ টাকা, ৩ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৯৭৩ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৫৩ হাজার ৬৭৫ টাকা ও ৩ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৯৮০ কেজি চা পাতার বিপরীতে ৫৩ হাজার ৭২৭ টাকা। একইভাবে ৪ ডিসেম্বর ৫৩ হাজার ৭০৩ টাকা, একইদিন ৫৩ হাজার ৭১৫ টাকা ও ৫৩ হাজার ৭১৫ টাকা, ২৮ নভেম্বর ৬৭ হাজার ৭২০ টাকা, ২ ডিসেম্বর ৬৭ হাজার ২৩২ টাকা, ১ ডিসেম্বর ৬৫ হাজার ৫৭৩ টাকা, ২৯ নভেম্বর ৬৮ হাজার ৮৭১ টাকা, ১ ডিসেম্বর ৬৬ হাজার ৫৪২ টাকা ও ৬৫ হাজার ৫৪২ টাকা।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন নাসিরাবাদ সার্কেলে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের কনডেন্সড মিল্ক অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বিধিবহির্ভূতভাবে দুই কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৫২২ টাকা রেয়াত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি রেয়াত গ্রহণ করার পরবর্তী সময়ে চলতি রেজিস্টারের মাধ্যমে আংশিক সমন্বয় করে। বাকি অর্থ সমন্বয় না করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে, যার ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের ১৬ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত রেয়াত সমন্বয় করেনি ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৩০২ টাকা। একইভাবে ৩ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯১ টাকা। ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৯ লাখ ৮০ হাজার ২৯০ টাকা, ১১ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৫৭৯ টাকা, ৮ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ১১ লাখ ৩৩ হাজার ২০৫ টাকা, ১ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২৭ লাখ ৭২ হাজার ৮০২ টাকা, ৬ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত ৩৫ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪৩ টাকা, ২ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ২০৫ টাকা।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় আবুল বিড়ি কোম্পানি দিয়ে ১৯৫৩ সালে এ গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৮ সালে এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল খায়ের মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিড়ি ও ট্রেডিংই ছিল মূল ব্যবসা। তবে চট্টগ্রামভিত্তিক আবুল খায়ের গ্রুপ বর্তমানে স্টিল, সিরামিকস, খাদ্যদ্রব্য, সিমেন্ট ও তামাকজাত পণ্য উৎপাদন করে থাকে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০