নিজস্ব প্রতিবেদক: আমদানিকারকরা আস্থার জায়গা তৈরি করলে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) সনদধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। গতকাল এনবিআর সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আস্থা, বিশ্বাস আর ভরসার জায়গা হলে এইও’র মূল ভিত্তি বাস্তবায়িত হবে। একজন আমদানিকারক দীর্ঘদিন থেকে পণ্য আমদানি করেন। কখনও রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেন না। আমদানি করা পণ্য পরীক্ষা ছাড়াই সরল বিশ্বাসে জাহাজ থেকে সরাসরি তার গোডাউনে নিয়ে যাবেন। আমরা সঠিকভাবে রাজস্ব পাব, কোনো তদারকি করতে হবে না, জাহাজ থেকে পণ্য নেমে সোজা তার গোডাউনে চলে যাবেÑএটাই আমরা চাই। আমরা চাই সবাই এ ধারার ভেতর আসুক। কিন্তু সেই আস্থার জায়গাটা অর্জিত হচ্ছে না বলে এইও সনদধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে না। আমদানিকারকরা আমাদের সেই আস্থার জায়গা তৈরি করে দেন, আমরা এইও’র সংখ্যা আরও বাড়াব।
উল্লেখ্য, আমদানি করা পণ্য দ্রুত খালাস করতে এইও ব্যবস্থা কার্যকর করেছে এনবিআর। এর মাধ্যমে আমদানি করা পণ্য পরীক্ষা ছাড়াই জাহাজ থেকে সরাসরি গোডাউনে চলে আসবে। সেই গোডাউনে শুল্কায়ন সম্পন্ন হবে। এর মাধ্যমে আমদানিকারকদের একদিকে সময় সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে ব্যবসার খরচ কমে আসবে। এখন পর্যন্ত প্রথম সারির তিনটি ওষুধ কোম্পানিকে এ সনদপত্র দেয়া হয়েছে।
আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে এখন কত সময় লাগেÑএমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি-রপ্তানিতে কাস্টমসের দীর্ঘসূত্রতা শুধু কাস্টমসের কারণে হয় না। আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত থাকে অন্যান্য অরগানাইজেশন। তাদের ক্লিয়ারের পরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিএসটিআই, অ্যাটমিক এনার্জি, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরিবেশ, পশুসম্পদ অধিদপ্তর, এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট প্রভৃতির ক্লিয়ারেন্স লাগে। ক্লিয়ারেন্স নিতে হয় ম্যানুয়াল সিস্টেমে। ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ) প্রকল্প বাস্তবায়ানাধীন রয়েছে। এ ক্লিয়ারেন্সগুলো অনলাইনে নিয়ে নিতে পারলে সময় অনেক সাশ্রয় হবে। আমদানি-রপ্তানিতে বিলম্বজনিত দোষ শুধু এনবিআরের কাঁধে না দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
রাজস্ব আহরণ চিত্র তুলে ধরে চেয়ারম্যান বলেন, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব লক্ষ্য ছিল এক লাখ ৪১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। আহরণ করা হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা কম। আহরণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে চার দশমিক ১০ শতাংশ।
তিনি বলেন, করোনাকালে স্থবির অর্থনীতির সময়ে এ অর্জন তিন বিভাগের কর্মচারীদের পরিশ্রমের ফসল। ভ্যাকসিন আসায় মানুষের ভেতর করোনাভীতি দূর হবে। করোনার প্রকোপ কমে আসবে। দেশ স্বাভাবিক অর্থনীতিতে ফিরে আসবে। আমাদের যে টার্গেট, সেটা অর্জন করার পথে অনেক দূর অগ্রসর হব।
তিনি বলেন, করোনা থাকা সত্ত্বেও কাস্টমস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আহরণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৪৩ কোটি ১২ লাখ টাকা; আর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় করোনার কারণে সাপ্লাই চেইনের কাস্টমস বাধার সৃষ্টি হতে দেয়নি।
এনবিআর সদস্য (কাস্টমস নীতি) সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া বলেন, আমদানি নীতি বা কোনো সংস্থার ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন না হলে দিনের পণ্য দিনেই খালাস হয়ে যায় গড়ে প্রায় ৬০ শতাংশ। অন্য কোনো সংস্থার ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হলে তা ক্লিয়ারেন্স নেয়ার ওপর নির্ভর করে। আর দুই দিনে খালাস হয় প্রায় ৭০ শতাংশ পণ্য। অন্য চালান খালাসে দেরি হয় রাসায়নিক পরীক্ষা বা অন্য কোনো কারণে।
এনবিআর সদস্য (কাস্টমস: নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) খন্দকার মুহাম্মদ আমিনুর রহমান বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বিল অব এন্ট্রি দাখিল না করে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কাজ শুরু হয় না। দেখা গেছে, আমদানিকারকরা প্রায় ৪০ শতাংশ বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে পণ্য আমদানির ১০ দিন পর। দ্রুত বিল অব এন্ট্রি দাখিল করার জন্য আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন পণ্য আমদানির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিল অব এন্ট্রি দাখিল না করলে জরিমানা গুনতে হবে। এনএসডব্লিউ বাস্তবায়িত হলে সময় কমে আসবে, পণ্য দ্রুত খালাস হবে।