নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অর্ধেক জনপদ জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সঞ্চালন লাইন বৈশাখী ঝড়ে আক্রান্ত হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। এদিকে মেরামতের সময় জাতীয় গ্রিডের আরেকটি সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট হওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণ জনপদের অন্তত ৩২ জেলার মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।
জানা যায়, গত সোমবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে ২৩০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক টাওয়ার ধসে আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ জাতীয় গ্রিড লাইনে বিপর্যয় হয়। ওই ঝড়ে ভৈরবের কালিপুর এলাকায় একটি টাওয়ার দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে যায়। এতে গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে ভৈরব, কুলিয়ারচরসহ আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঞ্চালন লাইন জাতীয় গ্রিড লাইনের টাওয়ার ধসে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল সকালে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা ত্রুটি মেরামতের জন্য প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া গতকাল সঞ্চালন লাইনে সমস্যা দেখা দেওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সহকারী ম্যানেজার (জনসংযোগ) এবিএম বদরুদ্দোজা খান জানান, ঘোড়াশাল-ঈশ্বরদী সঞ্চালন লাইনে গতকাল বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিভ্রাট দেখা দেয়। এতে পিজিসিবির রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল জোনে
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে সেসব এলাকার সব বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদনও থেমে যাওয়ায় দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।
তিনি বলেন, ২৩০ কেভি লাইন হাই ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইনের মধ্যে পড়ে। সারাদেশে পিজিসিবির তিন হাজার ১৮৫ সার্কিট কিলোমিটারের ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন রয়েছে। আশুগঞ্জের ওই লাইন মেরামত করার মধ্যেই গতকাল বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঘোড়াশাল-ঈশ্বরদী সঞ্চালন লাইন ‘ট্রিপ’ করলে দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশের জেলাগুলো বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ পাঠানোর জন্য দুটি ২৩০ কেভির লাইন আছেÑএকটি আশুগঞ্জ থেকে সিরাজগঞ্জে, আরেকটি ঘোড়াশাল থেকে ঈশ্বরদীতে। ঝড়ে আশুগঞ্জ থেকে সিরাজগঞ্জ লাইনের টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঘোড়াশাল থেকে ঈশ্বরদী লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ লাইনটি ওভারলোডের কারণে ট্রিপ করে। ফলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুই গ্রিড আলাদা হয়ে যায়।
জানা গেছে, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে দুই হাজার ২৪৯ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার মোট ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া আন্তঃদেশীয় গ্রিড লাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে। পিজিসিবির ওই চার জোনে মোট ৩২টি জেলা রয়েছে, যেখানে দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর বসবাস।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু করতেও কিছুটা বিদ্যুৎ লাগে। আবার কোনো কারণে কোনো সঞ্চালন লাইনে লোড বেড়ে গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। ফলে কোনো কারণে কোনো কেন্দ্র বা সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো সিস্টেমে সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হয়।
এদিকে দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকায় উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ জনপদের জেলাগুলোর বাসিন্দাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সেসব এলাকায় জরুরি কার্যক্রমের জন্য হাসপাতাল ও সেবাকেন্দ্রগুলোকে নির্ভর করতে হয় জেনারেটরের ওপর।
অপরদিকে বদরুদ্দোজা খান আরো জানান, গতকাল গঠিত তদন্ত কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী (ট্রান্সমিশন-২) কামরুল হাসানকে এ তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় জানতে চাইলে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী বলেন, আমরা দ্রুত সিস্টেম রিস্টোর করার চেষ্টা করছি। এখন অবস্থা আগের থেকে ভালো। বিচ্ছিন্ন অধিকাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ এসেছে। বাকিটাও শিগগিরই চলে আসবে।
Add Comment