সহযোগী কোম্পানিতে ১৪৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড। আর আইপিও তহবিল থেকে অর্থ ব্যবহার করে ২১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি সহযোগী কোম্পানিতে ১৪৪ কোটি টাকা ইকুইটি বিনিয়োগের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহে খরচ করবে। গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমকে শাফি চৌধুরী এসব কথা বলেন।

জানা যায়, ২০১৪ সালে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে ফার্নেস অয়েল জ্বালানিভিত্তিক ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চট্টগ্রামে স্থাপনের অনুমতির পর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করছে। আর ব্যবসায়িক সাফল্যের ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটি দুটি সহযোগী কোম্পানি গঠন করে। যার একটি কর্ণফুলী পাওয়ার লিমিটেড এবং অন্যটি হলো বারাকা শিকলবাহা পাওয়ার লিমিটেড। সাবসিডিয়ারি দুটির ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার। এরমধ্যে ১১০ মেগা-ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ফার্নেস ওয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পাওয়ার ২০১৯ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। অপরদিকে বারাকা শিকলবাহা পাওয়ার বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে ২০১৯ সালের মে মাসে। যার উৎপাদন সক্ষমতা ১০৫ মেগা-ওয়াট।

বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের প্রান্তসীমা মূল্য (কাট অফ প্রাইস) নির্ধারণে নিলাম আগামী ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭৫৫তম কমিশন সভায় বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারকে বিডিংয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। কোম্পানিটির বিডিং অনুমোদনের সময় কমিশন থেকে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কমিশন কর্তৃক সম্মতিপত্র ইস্যুর তারিখ থেকে আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত কোম্পানিটি বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বাড়াতে পারবে না এবং সব সময় সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ন্যূনতম ৫১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন শর্ত আরোপ করায় দীর্ঘ মেয়াদে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবে বলে মনে করেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা।

বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমকে শাফি চৌধুরী (মঞ্জুর কাদির শাফি) শেয়ার বিজকে বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে আমরাই প্রথম প্রতিষ্ঠান, যারা ডি-সালফারাইজেশন প্রযুক্তির প্ল্যান্ট স্থাপন করেছি, যা সালফার নিঃসরণকে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় রাখতে সক্ষম। তিনি আরও বলেন, সঞ্চালন লাইনের অপর্যাপ্ততার কারণে আমাদের দুটি সাবসিডিয়ারি বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণরূপে উৎপাদনে যেতে পারছে না। তবে, আগামী মে থেকে এ আমরা সম্পূর্ণ উৎপাদনে যেতে সক্ষম হব এবং আমাদের কোম্পানির আয়ও বৃদ্ধি পাবে। পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থের ব্যবহার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইপিও তহবিলের বড় অংশই কর্ণফুলী পাওয়ার এবং শিকলবাহা পাওয়ারে ইকুইটি বিনিয়োগে ব্যবহার করা হবে। বাকিটা ব্যবহার হবে আমাদের কোম্পানির ঋণ পরিশোধ ও অন্যান্য ব্যয়ে।

কোম্পানিটির চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী চৌধুরী বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আর এ জন্য আমরা পুঁজিবাজারে আসছি। এতে করে জবাবদিহিতা বাড়ে। অন্যদিকে বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে করেসপন্ডিং ব্যাংকিং করতে গেলেও সুশাসন ও শেয়ার ধারণের অবস্থা দেখা হয়। সব মিলিয়ে শেয়ারবাজারে আসতে পারলে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ে। যদিও আমাদের বারাকা পাওয়ার পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আছে।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কোম্পানিটি সম্মিলিতভাবে মুনাফা করেছে ৬৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের দ্বিগুণের বেশি। আর মোট সম্পদের পরিমাণ দুই হাজার ৬৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাববছরের আর্থিক বিবরণী অনুসারে, পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্মিলিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) ২৩ টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্মিলিত আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে চার টাকা ৩৭ পয়সা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০