বান্দরবানের নাফাখুমে

২০১২ সালের পর আবার বেড়াতে যাচ্ছি বান্দরবানের নাফাখুমে। রাতে রওনা দিয়েছিলাম। থানচি উপজেলা শহরে পৌঁছাই রাত সাড়ে ৩টায়। দিনটি রেমাক্রিতে থাকার পরিকল্পনা করি। টানা তিন দিন বন্ধ থাকায় পর্যটকদের চাপ ছিল বেশি। এজন্য রেমাক্রি যাওয়ার নৌকা পাচ্ছিলাম না। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর নৌকার ব্যবস্থা করি। থানচি থেকে ইঞ্জিনের নৌকা ছেড়ে দিল রেমাক্রির উদ্দেশে।

আমরা সাঙ্গু নদী দিয়ে পথ চলছি। নানা বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশের অন্য সব নদী থেকে আলাদা সাঙ্গু। নদীর পুরোটাই ছোট বড় পাথরে পরিপূর্ণ। সাধারণ জোয়ার ভাটা এ নদীতে ঘটে না। এর উৎপত্তি বাংলাদেশে, শেষ বঙ্গোপসাগরে। নদীর স্রোত সবসময় একমুখী, পাহাড় থেকে শুরু হয়ে থানচির দিকে নেমে গেছে। এর পানি অনেক স্বচ্ছ। আমাদের নৌকা চলছিল স্রোতের বিপরীতে আর পানি কম থাকায় মাঝে মাঝে নেমে নৌকা ঠেলতে হচ্ছিল। বেশ অ্যাডভেঞ্চারাস মনে হচ্ছিল পথটুকু। একটু ঝুঁকিও ছিল। পথে এক জায়গায় অনেক বড় কিছু পাথর দেখতে পাই। এর মধ্যে রাজা পাথর নামে একটি পাথর আছে। একটি উপজাতির লোকরা এ পাথরের পূজা করে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার প্রধান উৎস সাঙ্গু। বর্ষায় এ নদী কানায় কানায় টইটম্বুর হয়ে ওঠে। যাওয়ার পথে চোখে পড়লো তিন্দু বাজার। এখানে পর্যটকদের জন্য থাকার ভালো ব্যবস্থা আছে। রেমাক্রি পৌঁছাই রাতে। অনেকে পর্যটক এসেছেন বেড়াতে। রেমাক্রির স্থানীয় মানুষের মধ্যে তাই উৎসব উৎসব ভাব বিরাজ করছে। আমরা আগে থেকে একটা কটেজ ভাড়া করেছিলাম। কিন্তু আমাদের একটু আগেই ওইখানে অন্য আরেক দল পর্যটক উঠে পড়েছে। অগত্যা আমরা অন্য একটি ঘরে উঠি। এখানে কোনো মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। ২০১২ সালে রেমাক্রি বাজার অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে বেশ। ঘরবাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। রাতে একটা হোটেলে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন সকালে উঠতে দেরি হওয়ায় ১০টার পর নাফাখুমের উদ্দেশে রওনা দিলাম। যাওয়ার পথে অনেক ছোট ছোট দল দেখতে পাই  কেউ যাচ্ছে, কেউ ফিরে আসছে। যাওয়ার পথটা ভালোই উপভোগ করলাম। প্রায় সব দলই সঙ্গে করে খাবার নিয়ে যাচ্ছে। চিপস, বিস্কুট, পানির বোতল প্রভৃতি। যাওয়ার পথে প্লাস্টিকের অনেক প্যাকেট যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখি। প্রায় আড়াই ঘণ্টা হাঁটার পর নাফাখুম পৌঁছাই। অনেকে স্বপরিবারে এসেছেন, কেউ বন্ধুদের নিয়ে। পানি কম থাকায় গোসল করতে সুবিধা। নাফাখুমের নানা জায়গায় শ্যাম্পুর প্যাকেট, পানির বোতল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। তাই যে যেভাবে পারছে ময়লা ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে নাফাখুম হারাবে তার সৌন্দর্য। হয়তো জায়গাটা একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। একটু সচেতন হলে, যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে একটা পলিথিন ব্যাগে জড়ো করে রাখলে এমন বিশ্রী পরিবেশ দেখতে হতো না। আমরা সঙ্গে একটা পলিথিন ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলাম।

একজন আদর্শ ব্যাকপ্যাকারের সঙ্গে সবসময় একটা ট্র্যাশ ব্যাগ থাকে। মাটিতে বা পানিতে না ফেলে এর মধ্যেই আমরা জড়ো করি ব্যবহার করা প্যাকেট, পানির বোতল, শ্যাম্পুর প্যাকেট প্রভৃতি।

আসলে বাংলাদেশে এমন অনেকেই আছেন, যারা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে মানুষকে অবগত করেন না। যদিও হাতে গোনা ট্রাভেল গ্রুপ এ বিষয়ে সচেতন।

নাফাখুম থেকে ফিরতে বিকাল হয়ে গেল। দুপুরের খাবার সারি তখন। পরদিন সকালে ফেরার পথ ধরি। আসার সময় দুচোখ ভরে চারপাশ দেখতে থাকি। পাহাড়ে ভ্রমণ আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ। পর্যটকসংখ্যা  বেড়ে যাওয়ায় আদিবাসীদের আয়ও বাড়ছে। তবে এর চাপ পড়ছে প্রকৃতির ওপর। এ দিকটা নিয়েও ভাবতে হবে। আবার যখন এখানে আসব, এ নাফাখুম ও সাঙ্গু নদীকে কি এত সুন্দর অবস্থায় পাবো? মানুষ মুখ ফুটে বা লিখে প্রকাশ করতে পারলেও, প্রকৃতির কি সেই সুযোগ রয়েছে? প্রকৃতি নীরবে সয়ে যায় সবকিছু!

 

সাদমান সোবহান ইমরান, সফটওয়্যার প্রকৌশলী

 

 

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০