শেয়ার বিজ ডেস্ক: তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলে আসা মিয়ানমারে সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের স্টান গ্রেনেড, টিয়ারগ্যাস ও গুলিবর্ষণে আরও অন্তত ১০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার পুলিশের গুলিতে বিভিন্ন স্থানে ১০ প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছেন। খবর: রয়টার্স ও বিবিসি।
দেশটির এক চিকিৎসক জানান, দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর টানা দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল পুলিশের ব্যাপক দমন-পীড়নে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। সকালে মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াংগুনে শিক্ষকদের বিক্ষোভে স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। এ বিক্ষোভে অংশ নেয়া এক নারী নিহত হয়েছেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার হটিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অস্থিতিশীল রয়েছে মিয়ানমার।
অভ্যুত্থানের পর দেশটির নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতাকর্মীদের আটক করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জালিয়াতির মাধ্যমে এনএলডি জয়ী হয়েছে বলে অভিযোগ করে অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই জান্তা সরকার। প্রায় ৫০ বছরের সেনাশাসনের পর দেশটিতে গণতন্ত্রের যাত্রার কয়েক বছর যেতে না যেতেই আবারও সামরিক জান্তা ক্ষমতায় ফিরে আসায় লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছেন।
মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দেশটির নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। পশ্চিমের কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে মিয়ানমারের সেনা জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের প্রথম ক্যাথলিক কার্ডিনাল চার্লস মং বো এক টুইট বার্তায় বলেছেন, মিয়ানমার একটি যুদ্ধক্ষেত্রের মতো।
ইয়াংগুনের বিভিন্ন প্রান্তে স্টান গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর গুলিবষর্ণ করেছে পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার এক চিকিৎসক বলেন, বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসার পর হাসপাতালে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় রাজনীতিক কিয়াও মিন টিকে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় দাওয়েই শহরেও গুলিবর্ষণ করেছে পুলিশ। এতে তিনজন নিহত ও আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের নির্বাসিত নাগরিকদের পরিচালিত অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতি বলছে, মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে একজন নিহত হয়েছেন। এ শহরেও বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপকভাবে চড়াও হয়েছে পুলিশ। তবে স্থানীয় একটি দাতব্য সংস্থা বাগো শহরে দুজনের প্রাণহানির তথ্য দিয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লাশিও এবং দক্ষিণের মায়েক শহরেও চড়াও হয়েছে পুলিশ। মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং বলেন, কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ দমনে সর্বনি¤œ বল প্রয়োগ করছে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভে পুলিশের সহিংসতায় দেশটিতে তিন বিক্ষোভকারীর প্রাণহানি ঘটে।
এ নিয়ে দেশটিতে গত ১ ফেব্রুয়ারির অব্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটল। সহিংসতায় পুলিশের এক সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে সেনাবাহিনী। এদিকে, গত শুক্রবার সেনা অভ্যুত্থানে যুক্ত মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। নতুন এ পদক্ষেপের আওতায় সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ছাড়াও রয়েছেন সেনা সরকার গঠিত স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের আরও পাঁচ সদস্য।