নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দুপুরে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির জন্য জমায়েত শুরুর আগেই
পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এই ঘটনায় ছাত্রদলের সহসভাপতি মামুন খানসহ অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদলের বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়িতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের জায়গা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মানুষ দিগি¦দিক ছুটতে শুরু করে।
গতকাল সোয়া ১১টায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমবেত হতে থাকেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসেছিলেন।
সকাল ১১টায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল জাতীয় প্রেস ক্লাবের চত্বরে এসে পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ তাকে অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করা যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ অন্য নেতারাও ছিলেন সেখানে।
পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পরপরই সোহেল জাতীয় প্রেস ক্লাবের মূল গেট দিয়ে বাইরে এসে ফুটপাতে নেতা-কর্মী নিয়ে সমবেত হন। তখন পুলিশ অ্যাকশনে যায়, শুরু হয় লাঠিপেটা। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাব চত্বরে আশ্রয় নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকে।
সেখান থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে কেউ কেউ। পরে পুলিশের একটি দল প্রেস ক্লাবের ভেতরে ঢুকেও লাঠিপেটা করে এবং কয়েক রাউন্ড কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে।
এই ঘটনার পরপর দ্বিতীয় দফায় আবারও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা একত্র হয়ে প্রতিবাদ জানাতে চেষ্টা করলেও পুলিশ আবারও লাঠিপেটা করে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পুলিশের মারমুখী অবস্থানের মধ্যেও ‘মুশতাক হত্যার বিচার চাই’, ‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমাদের সঙ্গে’ প্রভৃতি সেøাগান দিতে থাকে।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের কয়েকজন সদস্যও আহত হন।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ সামনে রেখে সকাল ৯টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যাপকসংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, জলকামানের গাড়ি, আর্মার্ড কার, প্রিজন ভ্যান মোতায়েন করা হয়।
পেশাগত দায়িত্ব পালনে থাকা এটিএন বাংলার সিনিয়র ক্যামেরাপারসন মামুনসহ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন। এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভেতরে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় প্রেস ক্লাবের পাঁচ-ছয় কর্মচারী আহত হন।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, সমাবেশের কোনো অনুমতি নেই। সাধারণ মানুষের যানচালাচল ও তাদের নিরাপত্তা বিধানে তারা কাজ করেছেন। উল্টো বিক্ষুব্ধরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট মেরেছে ও লাঠি নিয়ে আক্রমণ করেছে।
বিএনপি মহাসচিব জাতীয় প্রেস ক্লাবের অবস্থান করেন সমাবেশে অংশ নিতে। এর মধ্যে সমাবেশ পণ্ড হলে দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি চলে যান।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, পাঁচ পুলিশ সদস্যসসহ অন্তত ৩০ জন হাসপাতালে আহত অবস্থায় আসেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়।
চিকিৎসা নিতে আসা ছাড়াও তাদের সঙ্গে আসা কয়েকজনকে পুলিশকে হেফাজতে নিয়ে যায় বলে প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
তবে এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আহতদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সহসভাপতি মামুন খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এজাজ শাহ, ইডেন কলেজ ছাত্রদল সদস্য সচিব সানজিদা ইয়াসমিন তুলি, ছাত্রদল ঢাকা মহানগর পূর্ব সহ-সভাপতি শাকিল চৌধুরী ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান রয়েছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় মওলানা আকরম খাঁ হলে জিয়া পরিষদের আয়োজিত সমাবেশ অংশ নিতে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, শাহবাগে আপনারা দেখেছেন কীভাবে সাধারণ ছাত্রদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আজকে তার প্রতিবাদে প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ পুলিশ রাষ্ট্রের প্রশাসনের নির্দেশে অন্যায়ভাবে মারপিট করবে। এর প্রতিবাদ করা যাবে না- এটা যদি হয় তাহলে তারা কেন বলে এদেশ গণতান্ত্রিক দেশ? সাংবাদিকরা দেখেছেন, কীভাবে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিপেটা করেছে এবং রাবার বুলেট ছুড়েছে। আমরা এখনো জানি না, বহু আহত হয়েছে। আমরা এই সভা থেকে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি, নিন্দা জানাচ্ছি।’