নিজস্ব প্রতিবেদক: এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটলে তৈরি পোশাক ও ওষুধশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ আশঙ্কা প্রকাশ করে এ বিষয়ে আগেভাগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।
বৈঠকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়নের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে খুশি হচ্ছি। কিন্তু উত্তরণের ফলে যে প্রভাবগুলো পড়বে তা বিবেচনা করতে হবে। প্রভাবগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বেকারত্ব বেড়ে যাবে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করেছে বলে কমিটিকে জানিয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রভাব বিষয়ে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান আরও বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশে গেলে আমরা এখন যেসব সুবিধা পাচ্ছি, তার অনেক কিছু বন্ধ হয়ে যাবে। এতে অনেক ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে আমাদের ওষুধশিল্প ও গার্মেন্টশিল্পের বিষয়টি দেখতে হবে। ওষুধশিল্পের প্যাটেন্ট বাবদ টাকা প্রদান করতে গেলে ওষুধ সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাবে। দেখা যাবে, প্যারাসিটামলের এক পাতা (১০টি ট্যাবলেট) ২০০ টাকা হয়ে গেছে। এটা যাতে না বাড়ে তার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তিনি জানান, আমরা এখন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) থেকে যেসব সুবিধা পাচ্ছি, সেগুলো আরও ১০ বছর বাড়ানো যায় কি না, সে বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করতে হবে। আমরা একটি চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে অস্ত্র বাদে সব ধরনের পণ্য বিনা শুল্কে এখন রপ্তানি করতে পারি। এগুলো যাতে অব্যাহত থাকে তার জন্য এখন থেকেই আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ফারুক খান বলেন, ‘অতীতে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ায় অনেক দেশ কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়েছে। তারা এলডিসি থেকে বেরিয়ে আবার এলডিসি হয়ে গেছে। এসব বিবেচনা করতে আমাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হবে।’
দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করি। কিন্তু সময়মতো শেষ করতে পারি না। এতে সময় বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্পের খরচও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এগুলো বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি যেটা আছে, তা বন্ধ করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশে গেলে সব সেক্টরে ট্যাক্স বাড়াতে হবে। কিন্তু আয় না বাড়লে ট্যাক্স বাড়ালে তো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। এগুলোর বিষয়ে ভাবতে হবে।’
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হবে, তা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে ব্রাজিলে রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামী এক বছরের মধ্যে সেখানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মাধ্যমে ট্রেড ফেয়ার আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে স্পেনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা, বাংলাদেশ-স্পেন ট্যুরিজম উৎসাহিত করা ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের নতুন দুয়ার উšে§াচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।
বৈঠকে রাষ্ট্রদূতদের নেতৃত্বে বিশ্বের যেকোনো একটি বা দুটি দেশে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে অনাবাদি জমি চাষাবাদের বিষয়ে পাইলট প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মো. আব্দুল মজিদ খান, নাহিম রাজ্জাক ও কাজী নাবিল আহমেদ অংশ নেন।