সাইফুল্লাহ আমান: বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পোশাক খাতের কোম্পানি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে একটি বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
নিয়োগকৃত এই বিশেষ নিরীক্ষক কোম্পানিটির ২০১৯ ও ২০২০ সালের আর্থিক বিবরণী নতুন করে পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেবে বিএসইসিকে।
আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের বিষয় এবং এর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয় বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করা বিএসইসির একটি রুটিন ওয়ার্ক। এই আলোকে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজেও নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়েছে কমিশন। কোম্পানিটির সার্বিক পরিস্থিতি নিরীক্ষণ করে কমিশনে রিপোর্ট দেবে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কমিশন।
এদিকে নিরীক্ষক নিয়োগের বিষয়টি এখন পর্যন্ত জানেন না বলে জানিয়েছেন আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, কোম্পানির কিছু বিষয় এখন আদালতে চলমান রয়েছে। নিরীক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বিএসইসি কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত তাদের জানায়নি বলেও জানান তিনি।
বিএসইসির বিশেষ নিরীক্ষক কোম্পানিটির সম্পদ ও দায় এবং কোম্পানির ইক্যুইটি পর্যালোচনা করবে। এটি উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের শনাক্ত করবে এবং বিগত দুই বছর যাবৎ আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং এ-সম্পর্কিত কোম্পানির মধ্যে যাবতীয় লেনদেনের সম্পূর্ণ বিবরণী প্রকাশ করবে।
নিয়োগকৃত নিরীক্ষক কোম্পানিটির আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদনের মান অনুযায়ী সম্পত্তি প্লান্ট এবং সরঞ্জাম, আয়, বিক্রয় ব্যয়ের হিসাব স্বীকৃতি এবং পরিমাপও তদন্ত করবে।
এ ছাড়া কোম্পানিটির অগ্রিম, গ্রহণযোগ্য, প্রদেয়, ঋণ এবং আর্থিক দায়বদ্ধতা, তাদের হিসাবস্থিতির স্বীকৃতি, পরিমাপ এবং গত দুই বছরে আর্থিক বিবরণীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনও নিরীক্ষার আওতায় আসবে বলে জানা যায়।
উপরন্তু কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় এবং কোম্পানির নিট সম্পদ মূল্য আয়ের প্রভাব সম্পর্কে তদন্ত করবে বিশেষ নিরীক্ষক।
এসবের পাশাপাশি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কোম্পানি সচিব, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা, সংস্থার সামগ্রিক প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার প্রধানসহ পরিচালনা পর্ষদের অন্যদের ভূমিকাও মূল্যায়ন করা হবে বলে জানা যায়।
পুঁজিবাজারে অত্যন্ত দুর্বল কোম্পানি হিসেবে লেনদেন হওয়া এ কোম্পানিটি ২০১৭ সালের শেষের দিকে প্রায় সব আইনি শর্তাবলি ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে ওটিসি মার্কেট থেকে মূল বাজারে ফিরেছিল। এর আগে প্রায় আট বছর ধরে এই কোম্পানিটি মূল মার্কেট থেকে তালিকাচ্যুত হয়ে ওটিসি মার্কেটে ছিল আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (সাবেক সজিব নিটওয়্যার)।
২০১০ সালে আলিফ গ্রুপ কোম্পানিটির শেয়ার কিনে এর মালিকানা নিয়েছিল। আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের আগের নাম ছিল সজিব নিটওয়্যার। ২০১৫ সালে সজিব নিটওয়্যার গার্মেন্টস লিমিটেড থেকে নাম পরিবর্তন করে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ নামের অনুমোদন দেয় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।
২০১৮ সালে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১৪৩ টাকা দিয়ে মূল বাজারে লেনদেন শুরু করে। লেনদেনের শুরুর সপ্তাহে এক হাজার ৫১৫ টাকায় পৌঁছায় কোম্পানিটির শেয়ারদর।
আলিফ গ্রুপ কোম্পানিটির পরিচালনায় আসার পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের চাহিদা তৈরি করেছিল, তবে বাজারে লেনদেনের শুরুর পরে শেয়ারের দাম ক্রমাগত পড়তির দিকে থাকায় এর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা একটি বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
এদিকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করতে পারেনি। কোম্পানি সচিব মাহফুজুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশ পেলে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে কোম্পানিটি। যদিও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে নিরীক্ষা শেষ করতে পারেনি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
২০২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ মাসে কোম্পানিটির সব খরচ বাদ দিয়ে মুনাফা হয়েছে ছয় কোটি ১১ লাখ টাকা এবং শেয়ারপ্রতি আয় ছিল এক দশমিক ৩৮ টাকা।
সর্বশেষ পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয় ২৬ টাকা ২০ পয়সায়। কোম্পানিটির বাজার মূলধন আছে ১১৫ কোটি টাকার, অনুমোদিত মূলধন আছে ১৫০ কোটি টাকার এবং পরিশোধিত মূলধন আছে ৪৪ কোটি টাকার। ২০১৭ সালে নতুনভাবে তালিকাভুক্তির পরে কোম্পানিটির লেনদেন হচ্ছে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বনি¤œ ২৬ টাকা ২০ পয়সায় এবং সর্বোচ্চ ৩৪ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়।
আলোচিত এ কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৯ সালে এর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান করে। সে বছর কোম্পানিটি তিন শতাংশ নগদ এবং সাত শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে ২৫ শতাংশ নগদ এবং ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয় বিনিয়োগকারীদের। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ শেয়ার আছে এর উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।