নিজস্ব প্রতিবেদক: মায়ের দোয়া বিরিয়ানি হাউস থেকে চার প্যাকেট তেহারি কিনে ফিরছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকাল থেকে বাসায় গ্যাস নেই। স্ত্রী ফোন করে খাবার নিয়ে যেতে বলেছেন। তাই দোকান বন্ধ রেখে তিনি বাসায় ফিরছেন। মায়ের দোয়া বিরিয়ানি হাউসটি মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের শাহ আলী মার্কেটে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সোয়া ২টার দিকে গিয়ে দেখা গেল, মানুষের ভিড়ে দোকানির কাছে যাওয়ার উপায় নেই। শুধু শোনা যায়, ‘আমারে দুই প্যাকেট’, ‘আমাকে চার হাফ’ দিন।
কোনো রকমে ঠেলেঠুলে ভেতরে ঢোকার পর বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, দুপুর ১২টার পর মানুষের চাপ শুরু হয়েছে। সেই থেকে একমুহূর্তের বিরাম নেই। ইতোমধ্যে চার ‘ডেগ’ (বড় হাঁড়ি) বিরিয়ানি বিক্রি করেছেন তিনি। অন্য সময় দুই ঘণ্টায় এক থেকে দেড় হাঁড়ি বিক্রি হয় তার।
রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলের অনেক এলাকায় আজ এই দৃশ্য দেখা গেছে। গ্যাস না থাকা এ ভোগান্তিতে পড়েন বাসিন্দারা। আমিনবাজার এলাকায় সড়কে কাজের সময় মাটির গভীরে গ্যাসের একটি পাইপ ফেটে যাওয়ায় এ সমস্যা দেখা দেয় মিরপুর, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কলাবাগানসহ আশপাশের এলাকায়।
মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকায় একটি খাবার দোকান থেকে খিচুড়ি কিনে ফিরছিলেন খাদিজা বেগম। সঙ্গে তার শিশুসন্তান। তিনি বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই দেখি গ্যাসের চাপ কম। কোনোরকমে রুটি ভাজতে পেরেছিলাম। দুপুরের খাবার রান্না করতে পারিনি।’
মিরপুরের পীরেরবাগ, আগারগাঁও, ঝিগাতলা, ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোড ও কলাবাগান এলাকা ঘুরে খাবারের দোকানে মানুষের ভিড় দেখা যায়। জিগাতলায় সুলতান ডাইনস নামের একটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা গেল ক্রেতার বেশ ভিড়।
যাদের সঙ্গতি রয়েছে, তারা রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনতে পেরেছেন। তবে নি¤œ আয়ের মানুষের অনেককে খেতে হয়েছে রুটি ও কলা। তেমনই একজন পীরেরবাগের মর্জিনা খাতুন। তিনি বলেন, খণ্ডকালীন গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে তিনি দুপুরের খাবার গৃহকর্তার বাসায় খান। তবে আজ গৃহকর্তার বাসায় রান্না হয়নি। তারও খাওয়া হয়নি। দোকান থেকে একটি রুটি ও একটি কলা কিনে খেয়েছেন। মেয়ের জন্যও তাই নিয়েছেন।
তিতাস জানিয়েছে, মেরামতকাজ শেষ হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তিতাসের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) গতকাল বিকালে বলেন, সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করার আশা করছি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক কখন হবে, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।
মিরপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, প্রায়ই শোনা যায় রাস্তায় কাজ করতে গিয়ে গ্যাসের পাইপ, পানির পাইপ ফেটে যায়। এগুলোর পেছনে অবহেলা, গাফিলতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।