উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী তালাত মাহমুদ ১৯২৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ে জন্ম গ্রহণ করেন।
শিল্পীজীবনে অগণিত শ্রোতার হৃদয় জয় করেছিলেন তালাত মাহমুদ। সহজাত প্রবৃত্তির গায়ক ছিলেন তিনি। প্রকৃত অর্থেই ভারতীয় নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কিংবদন্তি হয়ে আছেন তিনি। শুরুতে অবশ্য তিনি নিজেকে চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে উপস্থাপনের
চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
১৯৯২ সালে চলচ্চিত্রে তার সুরের অপূর্ব ব্যবহার ও গজলে সবিশেষ দক্ষতার কারণে ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ পদকে ভূষিত হন। ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে তার গানগুলোয় উচ্চ সাহিত্যিক কথকতার প্রয়োগ ছিল এবং শিল্প সমঝদার ভারতীয় উপমহাদেশে উর্দু, বাংলা ও হিন্দি গানেও সমান পারদর্শী ছিলেন তিনি।
সুদীর্ঘ সংগীতজীবনে প্রায় আটশ গান গেয়েছেন তিনি। তালাত মাহমুদ আধুনিক অর্ধ-শাস্ত্রীয় ও শাস্ত্রীয়বিহীন গজলের প্রকৃত রচয়িতা ছিলেন। ফলে সমসাময়িক অন্যান্য গজল গায়কের ওপর তার বেশ প্রভাব পড়ে। এর ফলে মেহেদি হাসান ও জগজিৎ সিংয়ের পাশে নিজেকে শামিল করেন। ১৯৫০-এর দশকে ভারত উপমহাদেশের জনপ্রিয় তিন পুরুষ গায়কের একজনরূপে নিজেকে
প্রতিষ্ঠিত করেন। অন্য দুজন হলেন মোহাম্মদ রফি ও মুকেশ।
তারা তিনজন উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক সময় দাপটে রাজত্ব করেছিলেন। সহজাত প্রতিভার বিকাশ ঘটেছিল তার গজলের মধ্যে। পঙ্কজ উদাস তাকে সর্বদাই ‘শাহানশাহ-ই-গজল’ উপাধিতে সম্বোধন করতেন।
১৯৫৬ সালে পূর্ব আফ্রিকায় প্রথম ভারতীয় গায়ক হিসেবে বিদেশে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ভ্রমণ করেছিলেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ বেশ কিছু দেশে যান। তালাত মাহমুদের গানগুলো বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়।
তার উল্লেখযোগ্য বাংলা গান : সংগীত পরিচালক কমল দাশগুপ্তের ‘দুটি পাখি দুটি তীরে’, সুধীন দাশগুপ্তের ‘এই রিমঝিম বরষা’, রবীন চট্টোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের এতো আলো তবু সে আমারে ডাকে’, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘এ যদি আকাশ হয়, তোমায় কী বলে আমি ডাকবো বলো’ ও ভি বালসারার ‘তুমি সুন্দর যদি নাহি হও’, রবীন ঘোষের ‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো’ প্রভৃতি।
তালাত মাহমুদ ১৯৯৮ সালের ৯ মে মৃত্যুবরণ করেন।
Add Comment