নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর দিনাজপুরের হিলি। করোনার মধ্যে এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে। এ বন্দরে দ্রুত শুল্কায়ন ও খালাসের ফলে সময় কমে এসেছে। এতে বাণিজ্যের খরচ কমে আসছে। ফলে এ বন্দরের প্রতি ব্যবসায়ীদের আস্থা তৈরি হচ্ছে। যাতে প্রতিনিয়ত আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাজস্ব আদায়। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩০ শতাংশ। আর নয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি আদায় হয়েছে সাড়ে ১২৮ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর নয় মাসে আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৩ শতাংশ।
## নয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি আদায় হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা
## মার্চ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি আদায় হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা
## মার্চ মাসে ৪৬১১ ট্রাক পণ্য আমদানি ও ৫৬ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসার পরিবেশ তৈরি, নজরদারি বৃদ্ধি ও দ্রুত পণ্য খালাস হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ বন্দর মুখী হচ্ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে অর্থবছর শেষে এ স্টেশনে গত অর্থবছরের চেয়ে দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় হবে। দ্রুত পণ্য খালাস আর আস্থা তৈরি হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের যেকোন সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হয়। ফলে করোনার পরিস্থিতির মধ্যেও আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে, বাড়ছে রাজস্ব। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আমদানি-রপ্তানি আরো বাড়বে।

হিলি শুল্ক স্টেশন সূত্র জানায়, হাকিমপুরের হিলি বন্দর দিয়ে পাথর, চাল, তোকমা, ইসোবগুল ভুষি, বাদাম, কাঁচা মরিচ, আদা, ভুট্টা, গম, জিরা, রাইস ব্রান, খৈল, পেঁয়াজ, স্যান্ড ষ্টোন, কোদাল, ক্লে পাউডার, ফিস মিল ইনগ্রিডিয়েন্ট, শুঁটকি, চায়না ক্লে, সয়াবিন আমদানি হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় চাল ও পাথর। চলতি অর্থবছরের মার্চ মাসে এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৪ হাজার ৬১১ ট্রাক বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানি করা পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ৫৭৪ প্রাক স্টোন চিপস, এক হাজার ৩৪৬ ট্রাক নন বাসমতি চাল, ৩১৯ ট্রাক স্টোন বোল্ডার, ২৯০ ট্রাক গম, ২৮৭ ট্রাক পেঁয়াজ, ৮২ ট্রাক জিরা বীজ আমদানি হয়েছে।
এছাড়া ভুট্টা, খৈল, আদা, মৌরি বীজ, বালির প্রস্তুর, অর্থপেডিক্স যন্ত্রাংশ, কোদাল, স্লেট পাথর, টাইলস, পাপড, মৎস্য খাদ্য, বিভিন্ন প্রকার বীজ, ন্যাচারাল গাম, ইসোবগুল ভূষি, সয়াবিন, মাটির গুড়া, বাসমতি চাল, তোকমা, গমের ভূষি, খনিজ লবণ, আখের গুড়, তেঁতুল বীজ, বিট লবণ, বোহেরা, ইলেকট্রনিক পণ্য ইত্যাদি পণ্য আমদানি হয়েছে। অপরদিকে, ভারতে ৫৬ ট্রাকে ১২ লাখ ৮০ হাজার কেজি রাইস ব্রান ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) এ শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে আদায় হয়েছে ২৮১ কোটি ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অর্থাৎ নয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৪ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা বেশি আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় প্রবৃদ্ধি ১৩০ শতাংশ। অপরদিকে, গত অর্থবছর নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) রাজস্ব আদায় হয়েছি ১৫৩ কোটি ২০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছর নয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি আদায় হয়েছে ১২৮ কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার টাকা বেশি আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর নয় মাসে আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৩ শতাংশ।
সূত্র জানায়, মার্চ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, আদায় হয়েছে ৬১ কোটি ৩৪ লাখ ২১ হাজার টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি আদায় হয়েছে ৩৬ কোটি ৪৮ লাখ ২১ হাজার টাকা বেশি। মার্চ মাসে আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪৭ শতাংশ। গত অর্থবছর মার্চ মাসে আদায় হয়েছিল ১৭ কোটি ৫২ লাখ ৫২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। আর চলতি অর্থবছর মার্চ মাসে গত অর্থবছরের মার্চের তুলনায় ৪৩ কোটি ৮২ লাখ ৬ হাজার টাকা বেশি আদায় হয়েছে।

অপরদিকে, চলতি অর্থবছর জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতিমাসেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ, তিনগুণ, আবার কোন মাসে চার গুণ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই মাসে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৪০ শতাংশ। এছাড়া আগস্ট মাসে ১৫৪ শতাংশ, সেপ্টেম্বর মাসে ২০৭ শতাংশ, অক্টোবর মাসে ১০১ শতাংশ, নভেম্বর মাসে ৮৪ শতাংশ, ডিসেম্বর মাসে ৪২ শতাংশ, জানুয়ারি মাসে ৭৩ শতাংশ ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫৫ শতাংশ।
হিলি স্থলবন্দরের কয়েকজন আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট জানিয়েছেন, দ্রুত পণ্য খালাস হচ্ছে। কোন প্রকার হয়রানি নেই। ফলে ব্যবসায়ীদের আস্থা তৈরি হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি বাড়লে রাজস্ব কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বন্দর ও শুল্ক স্টেশনের যন্ত্রপাতি, জনবল বৃদ্ধি, সড়ক সংস্কার করার কোন বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে হিলি শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার সাইদুল আলম রুবেল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সকল প্রকার অনিয়ম ও হয়রানি বন্ধ হওয়া, দ্রুততর সময়ে পণ্য চালান খালাস করা, কার্যক্রমের সকল ব্যাপারে কঠোর নজরদারি এবং ন্যায়সঙ্গত সমস্যার ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত ও সমাধান দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে আরো উৎসাহিত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বিগত বছরের সমান পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি হওয়া সত্ত্বেও রাজস্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজস্ব প্রবৃদ্ধির এই ধারাকে অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আমরা অর্থবছরের শেষ নাগাদ সচেষ্ট থাকবো।’ ###