শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও কৃষিনির্ভর জেলা। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষি ও কৃষক। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য। এর ধারাবাহিকতায় ঠাকুরগাঁও থেকে হারানোর পথে গরুর হাল ‘লাঙল জোয়াল’। এখন আর অতীতের মতো দেখা যায় না কৃষকের কাঁধে লাঙল জোয়াল, হাতে জোড়া গরুর দড়ি।
অথচ ১৫ বছর আগেও এখানকার স্বাভাবিক চিত্র ছিল এটি। ভোর হলেই গ্রামের কৃষকরা বেরিয়ে পরতেন লাঙল জোয়াল ও হালের গরু নিয়ে জমি চাষের জন্য। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রের আধিপত্যে গরুর হাল এখন বিলুপ্তির পথে। জমিতে বীজ বপন অথবা চারা রোপণের জন্য হাল ব্যবহার করে আর ওই মাটি মাড়িয়ে সমান করার জন্য মই ব্যবহার করা হতো। কৃষিকাজের জন্য পুরোনো যন্ত্র হিসেবে এই গরুর হাল ছিল বেশ প্রয়োজনীয়।
কৃষি আবাদের উপযোগী করার জন্য ষাঁড় ও মহিষ প্রয়োজন হতো। লাঙল দিয়ে হাল চাষ করতে কমপক্ষে একজন লোক ও এক জোড়া গরু অথবা মহিষ প্রয়োজন ছিল। এভাবে গ্রামীণ সমাজের হাজার বছরের ইতিহাসে জড়িয়ে রয়েছে লাঙল, জোয়াল, মই, গরু ও মহিষ। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এক সময় প্রায় সব বাড়িতে গরু লালনপালন করা হতো।
গরুগুলো যেন পরিবারের একেকটা সদস্যের মতো ছিল। তাদের দিয়ে একরের পর এক জমি চাষবাদে ব্যবহার করা হতো। তাজা ঘাস আর ভাতের মাড়, খৈল-ভুসি প্রভৃতি খাইয়ে পালন করা হতো তাদের। রোজ ভোরে সকালে ঘুম থেকে উঠে তাদের দিয়ে হালচাষ করা দিয়েই শুরু হতো কৃষিকাজ।
অনেক সময় হালচাষের জন্য ‘প্রশিক্ষিত’ জোড়া বলদের মালিককে সিরিয়াল দিতে হতো দিনের পর দিন জমি চাষে দেয়ার জন্য। চাষের মৌসুমে তাদের ব্যাপক কদর ছিল।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের মো. মনসুর আলী নামে একজন পেশাদার কৃষকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, অনেকের জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে চাষের লাঙল-জোয়াল আর গরুর পালের সঙ্গে। অতীতে গরু ও মহিষের হাল ছাড়া কোনো হাল ছিল না। গরু ও মহিষের হাল দিয়ে হাল চাষাবাদ করেই কৃষক কৃষিকাজ করতেন। এতে জমিতে বাম্পার ফলন হতো। চাষাবাদ ও দুধের জন্য কৃষক অনেক গরু মহিষ লালনপালন করতেন। এতে করে জমিতে অনেক জৈব সার হতো। এ জন্য ফসলও ভালো হতো। তবে বর্তমানে কৃষিতে আধুনিকায়নের ফলে যেমন আর গরুর হালের প্রয়োজন হয় না, তেমনি কৃষকদের আর অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে না। বর্তমানে তুলনামূলক কম সময় ও কম খরচে চাষাবাদ করা যায়।