মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ : বিধি-নিষেধ না থাকায় পরিচালকরা চাইলে যে কোনো সময় নিজের শেয়ার অন্যকে উপহার দিতে পারেন। আর যাকে উপহার দেওয়া হয়, তিনি যদি পরিচালক না হন তবে কোনো ধরনের ঘোষণা না দিয়েই (যিনি উপহার দিচ্ছেন তার শেয়ারে লকইন না থাকলে) তিনি শেয়ার বিক্রি করতে পারেন। অভিযোগ রয়েছে, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করছেন পরিচালকরা। এ পন্থা অবলম্বন করে তারা উপহারের নাম করে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছেন। এটাকে ‘কারসাজির হাতিয়ার’ বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ সংশিষ্টরা।
সংশিষ্টরা মনে করেন, পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি করতে হলে ঘোষণা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রি সম্পন্ন করতে হয়। যে কারণে তারা চাইলেই বেশি বা কাক্ষিত দরে শেয়ার বিক্রি করতে পারেন না। বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, কোনো শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী থাকা অবস্থায় পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা এলে ওই শেয়ারের দর কমে যায়। কারণ বিনিয়োগকারীরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে ঠিক করেন পরিচালকরা যখন শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন, তখন এ শেয়ারের দর কমবে। অন্যদিকে কাউকে শেয়ার উপহার দিলে সেই শেয়ার বিক্রি হচ্ছে কি না -তা বোঝার কোনো উপায় থাকে না। মূলত যাকে শেয়ার উপহার দেওয়া হয়েছে, তার শেয়ার বিক্রির কোনো নিয়ম না থাকায় এমন হয়।
এ প্রসঙ্গে এএফসি ক্যাপিটালের সিইও মাহবুব হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আমার জানামতে, পরিচালকরা কাকে কাকে শেয়ার উপহার দিতে পারবেন তা আইনে উলেখ করা আছে। যে কারণে কেউ চাইলে শেয়ার অন্য কাউকে উপহার দিতে পারবেন। তবে যাকে উপহার দেওয়া হচ্ছে তাদের শেয়ার বিক্রিরও একটা আইন থাকা দরকার। এতে যেমন বাজারের অস্বচ্ছতা আসবে, তেমনি পরিচালকরা কারসাজি করছেন- এমন অভিযোগ থেকেও তারা রক্ষা পাবেন।’
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে পরিচালকদের শেয়ার উপহার দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি আরগন ডেনিমসের পরিচালক আনোয়ারুল আলম চৌধুরী তার ছেলেকে সাত লাখ শেয়ার উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ খাতের অন্য কোম্পানি জাহিন টেক্সটাইলের পরিচালক মাসুদা খাতুন তার ভাই শাহ মুহাম্মদ জুবায়েরের কাছে ২৫ লাখ শেয়ার হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একইভাবে এনভয় টেক্সটাইলের পাঁচ পরিচালকও প্রায় ৮২ লাখ শেয়ার হস্তান্তর করেন। এর আগে সায়হাম কটনের পরিচালক তার মেয়েকে ৬০ লাখ শেয়ার উপহার দেন। একই অবস্থা দেখা যায় মিথুন নিটিংয়ের ক্ষেত্রে। এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রবিউল হক তার ছেলেকে নিজের কাছে থাকা ছয় লাখ শেয়ারের আড়াই লাখ শেয়ার উপহার দেন। এছাড়া বাজারে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সারা বছর পরিচালকদের শেয়ার উহার দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, যেসব কোম্পানির পরিচালক সম্প্রতি শেয়ার উপহার দিয়েছেন, সেসব কোম্পানির বেশিরভাগের দরই এখন ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ শেয়ার দর বেশি থাকায় এখন তারা দ্রুত শেয়ার বিক্রি করার জন্য উপহার দিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে যেমন নিয়ম রয়েছে তেমনি উপহার দেওয়ার বেলায়ও নিয়ম থাকা দরকার। নিয়ম না থাকায় তারা নিজের কাছে বেশি শেয়ার রেখে পরে উপহারের নাম করে এসব শেয়ার বিক্রি করে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে লুৎফর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজেকে বলেন, ‘শেয়ার উপহার দেওয়ার প্রথাই বাতিল করা উচিত। কারণ পরিচালকরা নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য ছেলেমেয়ে বা অন্য স্বজনের নাম করে শেয়ার বিক্রি করেন। এটা হয় নামমাত্র উপহার।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এমনিতেই পরিচালকদের শেয়ার বিক্রিতে কিছু শর্ত রয়েছে। এরপর শেয়ার উপহার দেওয়া নিয়ে শর্তারোপ করলে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসার আগ্রহ হারাবে। মূলত সে কারণেই এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
Add Comment