নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজারে মাছ, মাংস থেকে শুরু করে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শুক্রাবাদ, কলাবাগান, গ্রিন রোডসহ আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছ-মাংস, শাকসবজিসহ সবকিছুর দামই বাড়তি। ছুটির দিন হওয়ার সুবাদে স্থানীয় এসব বাজারে ক্রেতার উপস্থিতিও ছিল বেশি।
শুক্রাবাদ ও কলাবাগান মাছের বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ ৩৩০ থেকে ৩৬০ টাকা, কাতল ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, পাঙাশ ১৯০ থেকে ২২০ টাকা, পাবদা ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, ছোট তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, বড় তেলাপিয়া ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা, গ্রাস কার্প ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা ও শিং মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এক কেজি বা ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা, কাচকি ৩৫০ টাকা, মলা মাছ ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রাবাদ বাজারের মাছ বিক্রেতা আফাজ উদ্দিন বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বাজারে ক্রেতার ভিড় বেশি। তাই মাছের চাহিদা বেড়েছে। আড়ত থেকে বেশি দামে মাছ কিনতে হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
এদিকে গরু, খাসির মাংস ও মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে ডিমের। গরুর মাংস ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, খাসি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, ব্রয়লার ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, লেয়ার ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির ডিম ৩২ টাকা হালি (আগে ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা) ও হাঁসের ডিম ৪০ টাকা হালি (আগে ছিল ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা) দরে বিক্রি হচ্ছে।
একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সব ধরনের শাকসবজির দামও। গোল আলু, টমেটো, গোল বেগুন, লম্বা বেগুন, করলা, পটোল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, কচুর লতি, ঢেঁড়স, লাউশাক, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাকসহ সব ধরনের শাকসবজির দাম বেড়েছে।
গত সপ্তাহে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুন আজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়, পেঁয়াজের ঝাঁজ মাঝে একটু কমলেও এখন আবার বেড়ে হয়েছে ৫৫ টাকা। কাঁচামরিচ পূর্বে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও আজ হচ্ছে ৬০ টাকা, এক কেজি রসুন কিনতে গুনতে হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। আগে ছিল ১২০ টাকা। গোল আলুর দাম হয়েছে ২৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ২০ টাকায়। এছাড়া আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৫০ টাকা, গাজর (চায়না) ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এসব সবজি এক সপ্তাহ আগেও পাওয়া যেত ৫ থেকে ১০ টাকা কমে। এছাড়া মুদি দোকানগুলোয় সয়াবিন তেল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রাবাদ বাজারের মুদি দোকানি রফিকুল বলেন, নতুন করে তেলের দাম আরও বেড়েছে। নতুন যেসব বোতল আসছে সেগুলোর দাম ১৫২ টাকা করে। পুরোনো বোতল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। তবে এখন পর্যন্ত চালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। ২৫ কেজির ওজনের নাজিরশাইল চালের বস্তা ১৬৫০ থেকে ১৭০০ টাকা ও মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা ৩০০০ টাকায় বিক্রি করছি।
ক্রেতারা বলছেন, বর্তমান বাজারে সব কিছুর দাম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। এখন আবার নতুন করে বাজেট হয়েছে। বাজেটের প্রভাবে সামনে হয়তো অন্য জিনিসের দাম আরও বাড়তে পারে।
কলাবাগান কাঁচাবাজারে আসা স্থানীয় একটি মেসের ম্যানেজার আশিক বিল্লাহ বলেন, ঢাকায় আমরা যারা স্বল্প আয়ের মানুষ রয়েছি তাদের জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একটা মাছ কিনতে গেলে ৫০০-৬০০ টাকা লাগে। শাকসবজির দাম বেশি, তেলের দাম বেশি, চালের দামও বেশি। আমরা আসলে যাব কোথায়?