মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দেশের পুঁজিবাজারে রয়েছে আইপিও সংকট। এ অবস্থায় আইপিও অনুমোদনের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ঝুলে আছে প্রায় দেড় ডজন কোম্পানির আবেদন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে ১৭টি কোম্পানির আইপিও আবেদন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু রোড শো-ও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে আইপিও অনুমোদনে বিএসইসি অযথা কালক্ষেপণ করছে এমন অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে বিএসইসি বলছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পাওয়ায় অনুমোদন দিতে দেরি হচ্ছে।
জানা গেছে, পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য ‘বুকবিল্ডিং’ ও ‘ফিক্সড প্রাইস’-এর মাধ্যমে বাজারে তালিকাভুক্ত হতে ইচ্ছুক ১৭টি কোম্পানি। এগুলো হচ্ছেÑভিএস থ্রেড ডায়িং, ইফকো গার্মেন্টস, হ্যামপাল রি ম্যানুফ্যাকচারিং, এমুলিট ফার্মাসিউটিক্যালস, ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল, বসুন্ধরা পেপার, আমান কটন, রানার অটোমোবাইলস, বেঙ্গল পলি অ্যান্ড পেপার, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্দো-বাংলা, ইনডেক্স এগ্রো, নাহি এলুমিনিয়াম, ডেল্টা হাসপাতাল, জেনিস ইনফোসেস ও কাটোলি টেক্সটাইল।
বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা ব্যবসা সম্প্রসারণ, ঋণ পরিশোধ ও আইপিও’র কাজে ব্যবহার করবে কোম্পানিগুলো। কিন্তু আবেদন করার পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও অনুমোদন না পাওয়ায় হতাশ এসব কোম্পানির মালিক ও ইস্যু ম্যানেজাররা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘রোড শো হওয়ার পর অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন দিতে বিএসইসি কেন এত কালক্ষেপণ করছে বুঝতে পারছি না। বাইরের দেশগুলোয় এমন নিয়ম নেই। তারা অতি দ্রুত এ কাজগুলো করে থাকে।’
এ-প্রসঙ্গে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানি রোড শো কবে করলোÑসেটা বড় কথা নয়। নিলামের অনুমোদন পাওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র দরকার, সেটা দিতে পেরেছে কি না, তা দেখা জরুরি। কাগজপত্র পেলে কমিশনের কালক্ষেপণের প্রশ্নই আসে না।’
প্রাপ্ত তথ্যমতে, তালিকায় থাকা ৯ প্রতিষ্ঠান বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসবে। এর মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠানের ইতোমধ্যে রোড শো শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনও এসব কোম্পানি অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন পায়নি। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ইস্যু ম্যানেজাররা। তারা বলছেন, পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে সে অর্থ দিয়ে কি করা হবে, সে ব্যাপারে সব কোম্পানিরই কিছু পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু বিএসইসির কালক্ষেপণের কারণে সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
অন্যদিকে বিএসইসি’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বুকবিল্ডিংসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনাসহ আরও কিছু কাজ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের আইপিও অনুমোদন দিতে দেরি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, অপেক্ষমাণ ১৭টি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায়। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির অপেক্ষমাণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভিএফএস থ্রেড ডায়িং ২২ কোটি, ইফকো গার্মেন্টস ২০ কোটি, ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং ২০ কোটি, অ্যামিউলেট ফার্মাসিউটিক্যালস ১৫ কোটি, ইন্দো-বাংলা কোম্পানি ২০ কোটি, নাহি অ্যালুমিনিয়াম ১৫ কোটি, জেনেক্স ইনফিউসিস ২০ কোটি ও কাটোলি টেক্সটাইল ৩৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। অন্যদিকে বুকবিল্ডিং পদ্ধতির অপেক্ষমাণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ২০ কোটি, এসটিএস হোল্ডিংস ১৭ কোটি, বসুন্ধরা পেপার মিলস ২০০ কোটি, আমান কটন ৮০ কোটি, রানার অটোমোবাইলস ১০০ কোটি, বেঙ্গল পলি অ্যান্ড পেপার স্যাকস ৫৫ কোটি, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস ৭০ কোটি, ইনডেক্স এগ্রো ৪০ কোটি ও ডেল্টা হাসপাতাল ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘কোম্পানিগুলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্যে আসতে চায় না। আমি মনে করি, যে কোম্পানিগুলো পাইপলাইনে রয়েছে, সেগুলোর পাশাপাশি বড় দেশি-বিদেশি বড় প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৮৬ কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এর মধ্যে ভালো মানের কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। বাজারে ভালো শেয়ারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য এমন কোম্পানির প্রয়োজন রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
এদিকে গত দুবছর আইপিও তালিকাভুক্তি সন্তোষজনক হলেও এ বছর তার সংখ্যা কমে এসেছে। এ বছর তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা মাত্র তিনটি। ২০১৬ সালে তালিকাভুক্ত ১১টি কোম্পানির মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ড তিনটি, বস্ত্র খাতের তিনটি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের একটি, প্রকৌশল খাতের একটি, ওষুধ ও রসায়ন খাতের একটি, চামড়াশিল্প খাতের একটি ও বিমা খাতের একটি কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও অনুমোদন পায়। অন্যদিকে ২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানির মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ড তিনটি, প্রকৌশল খাতের তিনটি, বস্ত্র খাতের তিনটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের একটি, তথ্য ও প্রযুক্তি (আইটি) খাতের একটি এবং বিবিধ খাতের একটি কোম্পানি আইপিও অনুমোদন পায়।
Add Comment