১২ বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে তিনগুণ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১২ বছরের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিনগুণ। ২০০৯ সালে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এরপর ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করলে বাজার মূলধন অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে, বছর শেষে যা গিয়ে দাঁড়ায় তিন লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায়। সর্বশেষ গতকাল তা ছয় লাখ ৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর ডিএসইর বাজার মূলধন এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাজার মূলধন দাঁড়ায় তিন লাখ ৫০ হাজার ৮০০ কোটি টাকায়। ২০০৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজার মূলধন এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যায় এবং শতাংশের দিক থেকে বেড়ে যায় ৮৪ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএসই বাজার মূলধন সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করে তিন লাখ ৬৮ হাজার কোটিতে দাঁড়ায়। পরবর্তীকালে বাজার মূলধন কমে গেলেও নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির পাশাপাশি প্রায় এক বছর ধরে বাজার স্থিতিশীল থাকায় বাজার মূলধন উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে। ২০০৭ সালে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭৪ হাজার কোটি টাকা। ২০০৮ সালের শেষে গিয়ে তা পৌঁছায় প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকায়।

এদিকে বাজার মূলধন বাড়ার পেছনে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি বিশেষ অবদান রেখেছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকেরা। এছাড়া বর্তমানে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়ার কারণে বাজার মূলধন বাড়ছে বলে অভিমত দেন তারা। এ প্রসঙ্গে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, বাজারে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর এখন ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এছাড়া বাড়ছে নতুন কোম্পানির সংখ্যা। সেসব প্রতিষ্ঠানের মূলধনও বাজার মূলধনে যোগ হচ্ছে। ফলে বাজার মূলধন বাড়ছে। তিনি বলেন, বাজার মূলধন বাড়ানোর জন্য গ্রামীণফোনের মতো ভালো মানের প্রতিষ্ঠান বাজারে আনা দরকার।

অন্যদিকে বিগত বছরগুলোর আইপিও প্রবাহ দেখলে বাজার মূলধনে এর অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়। মূলত ২০১০ সালের পর থেকে বাজারে নতুন প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১ সালে বাজারে মোট ১২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত হয়, পরের বছর যা বেড়ে হয় ১৪টি। অন্যদিকে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত হয় ৩৪টি প্রতিষ্ঠান। ২০১৫ সালে বাজারে আসে নতুন ১৬টি প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালে এর গতি কিছুটা কমে যায়। এ বছর আটটি প্রতিষ্ঠান বাজারে আসে। এরপর ২০১৭ সালে আটটি, ২০১৮ সালে ১০টি এবং ২০১৯ ও ২০২০ সালে আটটি করে এবং চলতি বছরে চারটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসে। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে ধসের পর বাজারে আসে শতাধিক কোম্পানি। এ কারণে বাজার মূলধন বেড়েছে।

এদিকে আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন আরও বেশি হওয়া উচিত বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, বাজারে তুলনামূলকভাবে মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। বাজার মূলধন বাড়াতে হলে এমন প্রতিষ্ঠান বাজারে আনার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তারা। তাদের মতে, শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতে বাজারে বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার রয়েছে, তার বেশিরভাগ এখনও বিনিয়োগের অনুকূলে রয়েছে। এসব শেয়ারের দর আরও বাড়লেও অতিমূল্যায়িত হবে না, বরং বাজার মূলধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

ডিএসইর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজার মূলধন উল্লেখযোগ্য হারে না বাড়ার পেছনে কারসাজিকারীদের হাত রয়েছে। তারা কারসাজি করে স্বল্প শেয়ারধারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাড়িয়ে ফেলে। তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছু ভালো শেয়ার বিক্রি করে ওইসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগ করে। এতে ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কমে যায়। ফলে বাজার মূলধনও কমে যায়। পক্ষান্তরে স্বল্প শেয়ার থাকা প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বাড়লেও তা বাজার মূলধনে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারে না।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারের অবস্থা এখন ভালো রয়েছে। বাজারে নতুন কোম্পানির পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগকারী যোগ হচ্ছেন। ফলে সবদিক দিয়ে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিএসইসিও চেষ্টা করছে যাতে বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় থাকে। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে বাজার সামনে আরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০