টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে সঠিক জ্বালানি মিশ্রণ বড় চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক: টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য প্রাথমিক জ্বালানির নিরাপদ সরবরাহ, সঠিক জ্বালানি মিশ্রণ চূড়ান্তকরণসহ জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বড় ধরনের সাফল্য পাওয়া এখনই সম্ভব নয়। তবে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে জলবিদ্যুৎ আমদানি বাড়ানো সম্ভব হলে তা নন-ফসিল ফুয়েল বিদ্যুৎ মিশ্রণ বাড়াতে সহায়তা করবে। পরিবেশগত বৈশ্বিক পরিবেশগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাংলাদেশের জন্য আরও ২০ বছর পর্যন্ত নিজস্ব বা আমদানি করা কয়লা ব্যবহারে বাধা নেই। তবে ট্রানজিশনে জ্বালানি হিসেবে সবচেয়ে উপযুক্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস।

গতকাল ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অব এনার্জি-পাওয়ার সেক্টর অ্যান্ড বাজেট ফর ২০২১-২২’ শীর্ষক এমটুকে ইপি টকস-এ এমন মতামত উঠে আসে। ভার্চুয়াল এই আয়োজনের সঞ্চালনা করেন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। শিল্পের প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ঢাকা শহর এককভাবে ৪৬ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। বিদ্যুৎ ব্যবহার সুষম করতে হলে দেশের অন্য বড় শহরগুলোয় নির্দিষ্ট স্থানে দ্রুত শিল্পায়ন করা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট স্থানে শিল্প-কারখানা নির্মিত হলে সিস্টেম লস কমবে। উন্নত দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসছে। বাংলাদেশও জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে পর্যালোচনা করছে। ভবিষ্যতে গ্যাস বা বিদ্যুৎ আমদানিতে সাসটেইনেবল বিকল্প খোঁজা হবে।

কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন করার উদ্যোগ পরবর্তী মাস্টারপ্ল্যানে চূড়ান্ত করা হবে। দীঘিপাড়ার সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আন্ডার গ্রাউন্ড খনি করলে সেখান থেকে ১২ শতাংশের বেশি কয়লা উত্তোলন করা যাবে না, যা লাভজনক হবে না বিধায় খনির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। আবার কয়লা আমদানির অবকাঠামোতে সংকট রয়েছে।

সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ খান বলেন, আমরা আজকে যেখানে আসতে সক্ষম হয়েছি, তার পেছনে বড় অবদান বিদ্যুৎ ও জ্বালানির। প্রতি বছর বাজেটের পর দেখি মন্ত্রণালয় যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটা ইনোভেশনের সঙ্গে অনেকে মুনাফা পেয়েছে। যেমন গাড়ি আবিষ্কারের পর রাস্তা হয়েছে। এখন একজনেই মুনাফা লুটছে অ্যাপল কিংবা অন্যরা। অসমতা এসে গেছে, এর মধ্যে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব। আমাদের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নতুন জায়গায় এসেছি। ম্যাচের কাঠির চেয়ে গ্যাসের দাম কম ছিল। অনেকে বলছেন, সোকলড অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ চলবে না। লংটার্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থানে রয়েছেন বলে মনে করি। গত বছর যখন এলএনজির দাম বেড়ে গিয়েছিল তখন এইচএফও দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৯ শতাংশ ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। কিন্তু কতটুকু মানসম্মত দিতে পারছি সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। আমাদের ক্যাপটিভ রয়ে গেছে, শিল্প নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিয়ে প্রশ্ন আছে।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলেন, ‘ভারত পাকিস্তানের ওভারঅল আবাসিকে ব্যবহার যদি দেখি ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের বেশি। জিডিপি ভারতের চেয়ে বেশি। তবে ওভারঅল ব্যবহার বাড়াতে হবে। না হলে সংকট থেকে যাবে।’

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘একটা সময় অনেক খারাপ গেছে। এখন আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আসতে পেরেছি।’

পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মেইন সমস্যা হচ্ছে গ্রামে, প্রতিদিন লোডশেডিং হচ্ছে। জেনারেটর চালাতে হচ্ছে, এ জায়গাটিতে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

খন্দকার আব্দুস সালেক বলেন, ‘এই সরকারকে নিঃসন্দেহে মোবারকবাদ দিতে হবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের জন্য। কোয়ালিটি নিশ্চিত করার দুটি চ্যালেঞ্জ, একটি হচ্ছে প্রাইমারি এনার্জি। আরেকটি হচ্ছে বিদ্যুতের ডিস্ট্রিবিউশন ও ট্রান্সমিশন সিস্টেম।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০