নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘লাইকি’ ও ‘বিগো’ লাইভ অ্যাপে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে বছরে শতকোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই অ্যাপে প্রধানত টার্গেট করা হয় দেশের যুবসমাজ ও প্রবাসীদের। তারা কথিত ডায়মন্ডের বিনিময়ে নির্ধারিত তরুণীদের অশ্লীল লাইভ আড্ডায় যুক্ত হন। বাংলাদেশি এমন লক্ষাধিক অ্যাপ ব্যবহারকারী অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও ব্যাংকের মাধ্যমে ডায়মন্ড কিনছেন। আর সেসব ডায়মন্ড কেনার মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে কোটি টাকা।
দেশে এসব অ্যাপ পরিচালনাকারী এক বিদেশি নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তাররা হলোÑমোস্তাফা সাইফ রেজা (২৬), মো. আরিফ হোসেন (২৭), এসএম নাজমুল হক (২৭), আসমা উল হুসনা সেজুতী (২৮) ও অজ্ঞাতপরিচয় একজন বিদেশি নাগরিক। গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সিআইডি সাইবার পুলিশের ডিআইজি জামিল আহমেদ।
গ্রেপ্তার বিদেশি নাগরিক বিগো লাইভ ও লাইকির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বাংলাদেশি নাগরিক মোস্তফা সাইফ রেজা বিগোর বাংলাদেশি অ্যাডমিন। মো. আরিফ হোসেন বাংলাদেশের মেয়েদের মাসিক বেতনে চাকরি দিয়ে বিগো লাইভের সঙ্গে যুক্ত করত। এসএম নাজমুল হক ভার্চুয়াল মুদ্রা-ডায়মন্ড বিক্রির অন্যতম প্রধান বাংলাদেশি এজেন্ট ও আসমা উল হুসনা সেজুতি বিগো লাইভের প্রধান অ্যাডমিন।
ডিআইজি জামিল আহমেদ বলেন, এসব অ্যাপে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে যুক্ত হতে ডিজিটাল কয়েন ডায়মন্ড ব্যবহার করা হয়। ডায়মন্ড বিক্রির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করছেÑএমন অভিযোগে তদন্তের সূত্র ধরে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব লাইভে সাধারণত দেশের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশ নেন। এ ভিডিও লাইভে কথিত বিনোদনের আড়ালে নানা অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়া হতো। যিনি যত বেশি ডায়মন্ড ব্যবহার করতে পারেন, তিনি তত বেশি সময় ভিডিওতে অশ্লীলতা করতে পারতেন।
আর এসব ডায়মন্ড সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন এজেন্সি। এসব এজেন্সির প্রত্যেকের একাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে। সাধারণত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব এজেন্সির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সাধারণ ব্যবহারকারীরা এজেন্সির পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ দিয়ে ডায়মন্ড কেনেন।
বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো ডায়মন্ড কেনেন বিদেশি অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। ফলে বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যমে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে। গ্রেপ্তারদের বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে প্রায় শতকোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, লাইকি ও বিগো লাইভ অ্যাপ বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা নিয়ন্ত্রণকারীদের এসব বিষয়ে নজরে আনব। এছাড়া আমরা এসব অ্যাপ সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। অশ্লীল ভিডিও যারা দিচ্ছেন, তাদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে বিগো টেকনোলজি (বিগো) জানিয়েছে, যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি শূন্য সহনশীলতা (জিরো টলারেন্স) নীতি অনুসরণ করে। একইভাবে প্রতিষ্ঠানটি যে কোনো ব্যক্তির দ্বারা অপরাধের ক্ষেত্রেও জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। এক্ষেত্রে সে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কোনো এজেন্সি পার্টনার কি না, তা নির্বিশেষে এ নীতি অনুসরণ করা হয়। যে কোনো অপরাধমূলক আচরণ মোকাবিলায় আমাদের এ খাতের শীর্ষ প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি কঠোর নীতিমালা রয়েছে।
একই সঙ্গে আমরা কোনো পক্ষপাত করি না, কিংবা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অপরাধমূলক কোনো কাজে বিগোর নাম ব্যবহারের অসদিচ্ছা থাকলে তাদের সমর্থনও করি না। আমরা এ ঘটনার তদন্ত করছি। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কাজ করব। আমাদের ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরিতে আমরা আগের মতোই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভবিষ্যতেও আমরা একইভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব।