২০২০-২১ অর্থবছর

৯ মাসেই ক্যাপাসিটি চার্জ ১০ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়ে গেছে বেশকিছু ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে নতুন করে উৎপাদনে এসেছে বড় কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে বিদ্যুৎ খাতে কমেনি ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা। বরং চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) এ চার্জ গুনতে হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

পিডিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর মার্চ শেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫১৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ছিল ১০ হাজার ৩৭৭ মেগাওয়াট। যদিও কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার মাত্র ৪২ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে।

এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে কেনা হয় দুই হাজার ৮৬৮ কোটি ৭১ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এতে ব্যয় হয় ২২ হাজার ৬৬৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জই ছিল ১০ হাজার ১৪৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় ৪৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে অর্থবছর শেষে ক্যাপাসিটি চার্জ ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে না। তাই এখনই বিস্তারিত মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তবে চলতি বছর নতুন কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বেড়েছে। ফলে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।

পিডিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর ৯ মাসে সর্বোচ্চ ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য। কয়লাভিত্তিক এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল দুই হাজার ৬৭৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। যদিও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ায় কেন্দ্রটিতে পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট নিয়মিতই বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। অপর ইউনিটে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। এতে কেন্দ্রটিতে ২৮৪ কোটি ৪১ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। আর সক্ষমতার অর্ধেক বসে থাকায় কেন্দ্রটিতে গড় বিদ্যুৎ পড়েছে ৯ টাকা ৪৪ পয়সা। তবে সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হলে তা সাড়ে ছয় টাকায় নেমে আসবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে চলতি অর্থবছর ৯ মাসে ইউনাইটেড পাওয়ারের ফার্নেস অয়েলচালিত ৩০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ২২৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর গাজীপুরে অবস্থিত সামিটের ৩০০ মেগাওয়াট ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৯৪ কোটি তিন লাখ টাকা।

পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০-১১ থেকে ২০১৯-২০ পর্যন্ত ১০ বছরে বেসরকারি খাত থেকে কেনা হয় ২১ হাজার ৯৬৩ কোটি ৭৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এজন্য পিডিবিকে বিল পরিশোধ করতে হয় এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জই ছিল ৫৯ হাজার ৬১১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

১০ বছরের মধ্যে গত (২০১৯-২০) অর্থবছর জুন শেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৮ হাজার ৯৬৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ছিল আট হাজার ৪১১ মেগাওয়াট। বেসরকারি এসব কেন্দ্র থেকে কেনা হয় দুই হাজার ৮৮৬ কোটি ৭৬ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এতে ব্যয় হয় ২০ হাজার ৫৫৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জই পরিশোধ করা হয় ১০ হাজার ৮৫২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছর বেসরকারি খাত থেকে কেনা হয় দুই হাজার ৭১৩ কোটি ৩০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এতে ব্যয় হয় ২০ হাজার ৭৮১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জই ছিল আট হাজার ৭২২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

একইভাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছর বেসরকারি খাত থেকে কেনা হয় দুই হাজার ৫২৩ কোটি ৩৪ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এতে ব্যয় হয় ১৬ হাজার ৬৯২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ছয় হাজার ২৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে কেনা হয়েছিল দুই হাজার ৪৪৫ কোটি ২৮ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এতে ব্যয় হয় ১৪ হাজার ৭৩৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ পরিশোধ করা হয় পাঁচ হাজার ৭৬৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় পাঁচ হাজার ৩৭৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চার হাজার ৬৬৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চার হাজার ৭১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৪৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে পাঁচ হাজার এক কোটি ২৩ লাখ টাকা ও ২০১০-১১ অর্থবছরে দুই হাজার ৭৮৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০