গত বছর যখন বাজেট ঘোষণা করা হয়, তখন আমাদের দেশে করোনা নতুন বিষয় ছিল। ফলে করোনার অভিঘাত বিবেচনার সুযোগ ছিল না। এরই মধ্যে করোনার অভিঘাত সবার কাছে স্পষ্ট। কার ওপর কেমন প্রভাব পড়েছে, কমবেশি সবাই জানে। তাই মনে করা হচ্ছিল, এবারের বাজেটে কর্মসংস্থান সবিশেষ গুরুত্ব পাবে। কত মানুষ যে চাকরি ও কাজ হারিয়েছে, তার সঠিক তথ্য নেই। আবার প্রতিবছর পড়ালেখা শেষ করা বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী কর্মজীবনে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকে। চাকরি হোক কিংবা উদ্যোক্তা হোক; জীবিকা নির্বাহের জন্য কিছু একটা করতেই হবে। পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে।
কভিডকালে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্র সীমিত হয়ে আসছে। সবার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাও সহজ কাজ নয়। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি চলমান রাখতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানদের মধ্যে বিরোধে কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। তাদের বিরোধে টাকা যেন ফেরত না যায়। এতে সাধারণ মানুষ যেমন উন্নয়নকাজ থেকে বঞ্চিত হন, অতিদরিদ্র শ্রমিকরাও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। অবশ্য কোনো কাজ না করেই শ্রমিকদের নামে টাকা তুলে সরকারি টাকা আত্মসাতের দৃষ্টান্তও কম নয়।
হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি হোক, আর তরুণ-তরুণীদের জন্য চাকরি হোক, এটির ব্যবস্থা করার মূল দায়িত্ব সরকারের। শনিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাজেট ডায়ালগ-২০২১’ শীর্ষক বাজেট-পরবর্তী অনুষ্ঠানে এমনই মন্তব্য করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা বলেছেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বিশেষ করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়ে বাজেটে কিছুই বলা হয়নি। মহামারির বাজেটটি সেভাবেই হওয়ার দাবি রাখে। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা কর্মজীবীদের বিমার বিষয়টি পরিকল্পনায় রাখা যেত।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বেসরকারি খাতের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু বেসরকারি খাত যেখান নিজেই ধুঁকছে, সেখানে তাদের পক্ষে এত বেশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। সব দায় ঢালাওভাবে বেসরকারি খাতের ওপর চাপানো উচিত হবে না। কর্মসংস্থানে বেসরকারি খাতকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। কীভাবে এগিয়ে আসবে, সরকার সে নির্দেশনা দিতে পারে।
সরকার বেসরকারি খাতে অনেক প্রণোদনা দিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পেয়েছে, তারা কী পরিমাণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছে, তা নির্ণয় করতে হবে।
প্রণোদনার অর্থ যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবহার হয়, নিশ্চিত করতে হবে। করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ কোন কোন খাতে প্রণোদনা দিয়েছে, সেটিও বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। ছোট-বড় সব উদ্যোক্তা ঋণ-সহায়তা পেলে তারাও কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
স্থানীয় সরকারের দুর্বলতা-দুর্নীতির কারণেও কর্মসৃজন কর্মসূচি যেন ব্যাহত না হয়, সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে কোনো হেরফের হলে দরিদ্র আরও দরিদ্র হতে পারে। যেসব প্রবাসী দেশে আটকে গেছেন, তাদের ফেরার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে হবে। কিংবা তাদের আয়বর্ধক কোনো কাজে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মসংস্থানের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে।