জাহাজভাঙা ব্যবসা

কাশেম রাজার ঋণ আদায়ে জমি নিলামে তুলছে ব্যাংক

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: জাহাজভাঙা ব্যবসায় আলোচিত ব্যবসায়ী আবুল কাশেম রাজা। তিনি ব্যবসায়ী মহলে কাশেম রাজা নামে পরিচিত। একসময় জাহাজভাঙা ব্যবসায় শীর্ষ ব্যবসায়ীর তালিকায় ছিলেন তিনি। তবে নানা কারণে ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে গুটিয়ে আনেন ব্যবসা। ব্যাংকে জমা হয় বিপুল ঋণ। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের সিংহভাগ দায়-দেনা মিটিয়ে ব্যবসার পরিসর ছোট করে ছেলেদের হাতে তুলে দেন ব্যবসা। এখন ছেলেদের কেআর (কাশেম রাজা) গ্রুপ জাহাজভাঙায় শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তবে কাশেম রাজার খেলাপি ঋণ এখনও পরিশোধ করা হয়নি। তার মালিকানাধীন বিবিসি স্টিলের কাছে এবি ব্যাংকের খেলাপি পাওনা ২৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

এবি ব্যাংক লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, জাহাজভাঙা ব্যবসায়ী আবুল কাসেম এবি ব্যাংকের পাহাড়তলী শাখা থেকে ঋণ নেন, যা নিয়মিত পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত চেকের বিপরীতে পাঁচটি এনআই অ্যাক্টে মামলা করে। বারবার পাওনা পরিশোধের তাগাদা দেয়া হলেও তিনি পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নেননি। গত ২০ মে পর্যন্ত বিবিসি স্টিলের কাছে সুদাসলে খেলাপি পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ৮৫ লাখ ২৭ হাজার ৬২৮ টাকা। আর এ খেলাপি ঋণের বিপরীতে সিতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ সোনাইছড়ি মৌজায় প্রায় ১৪৮ শতক জমি বন্ধক রয়েছে। অর্থ অনাদায় থাকায় পাওনা আদায়ের জন্য আগামী ২৯ জুন এবি ব্যাংকের পাহাড়তলী শাখায় নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

অপরদিকে শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রি-সাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের পুরনো জাহাজ (স্ক্র্যাপ) ব্যবসায়ীরা ১৪৭টি পুরনো জাহাজ আমদানি করেছিলেন। এর মধ্যে সীতাকুণ্ড এলাকার ব্যবসায়ী কাশেম রাজার ছেলে সেকান্দর হোসেন ও তসলিম উদ্দিনের মালিকানাধীন কেআর (কাশেম রাজা) গ্রুপের পাঁচ প্রতিষ্ঠান মোট ২৬টি জাহাজ আমদানি করে। তরুণ ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চসংখ্যক পুরনো জাহাজ আমদানি করে তালিকায় প্রথম (শীর্ষ) অবস্থানে উঠে আসে। এর মধ্যে সেকান্দর হোসেনের মালিকানাধীন এসএসটি শিপ রি-সাইক্লিং চারটি, কিং স্টিল আটটি, কেআর স্টিল চারটি ও কেআর শিপ রি-সাইক্লিং ইয়ার্ড তিনটি এবং তসলিম উদ্দিনের মালিকানাধীন এনবি স্টিল সাতটি জাহাজ আমদানি করে। এসব আমদানিকৃত জাহাজের ওজন ছিল দুই লাখ এক হাজার ৯৩৪ লাইট ডিসপ্লেসমেন্ট টনেজ (এলডিটি)। আর এলডিটি-ভিত্তিক হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কেআর গ্রুপ।

নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক এবি ব্যাংক লিমিটেডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, কাশেম রাজার এখন ব্যবসা নেই। তিনি পাওনা পরিশোধ করবেন বলে বারবার কথা দিয়েছেন, কিন্তু পাওনা পরিশোধ করেন না। আমরা তার বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করেছি। এখন আইন অনুসারে পাওনা আদায়ে ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি। যদিও তার ছেলেরা ব্যবসায় ভালো করছেন, তারা ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করবেন বলে কথা দিয়েছেন, কিন্তু এখনও পরিশোধ করেননি। আর ব্যর্থ হলে আমরা অর্থঋণ আইন অনুসারে আদালতে মামলা করব।

খেলাপি ঋণের বিষয়ে জাহাজভাঙা ব্যবসায়ী আবুল কাসেম রাজা শেয়ার বিজকে বলেন, মামলা জটিলতার কারণে গত দুই বছর ইয়ার্ড ও ব্যবসা বন্ধ। তখন চাহিদানুসারে এবি ব্যাংক এলসি দিতে পারেনি। যদিও বিভিন্ন সময়ে এবি ব্যাংকের ৩৩৭ কোটি টাকা ঋণ শোধ করেছি। আমার জানামতে, মাত্র ১৫ কোটি টাকা পাওনা ছিল, যা তাদের হিসাবে ১৪ শতাংশ সুদসহ এখন ২৮ কোটি টাকার মতো। তারা তো আমাকে খেলাপি ঘোষণা করেনি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে দেখানোর জন্য এবি ব্যাংক আমার কাছ থেকে খালি চেক নিয়েছিল। পরে এগুলো দিয়ে এনআই অ্যাক্টে মামলা করেছে। আর বকেয়া টাকা পরিশোধ করার জন্য পুনঃতফসিল করার আবেদনও করেছিলাম। কিন্তু ৫০ লাখ টাকা নিয়েও তারা ঋণ নিয়মিত করেনি। তাদের কারণে আমি খেলাপি হয়েছি।

তিনি বলেন, আমার ব্যবসায়িক জীবনে খেলাপি হওয়ার রেকর্ড নেই। আমি এনসিসি ব্যাংকে ৮৫৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। পাশাপাশি ইস্টার্ন ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংকের সব লোন আমি পরিশোধ করেছি। বাকি সম্পদ ছেলেদের দিয়ে দিয়েছি। তারা এখন অনেক ভালো ব্যবসা করছে। আমি এখন ব্যবসা করি না, তবে বিবিসি স্টিল নাম দিয়ে আবারও ব্যবসা করতে চেয়েছিলাম। এর মধ্যে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা মামলা করেছে, যে কারণে প্রক্রিয়াটি ঝুলে আছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০