রমজানের আগেই পণ্যের দামে নাকাল ক্রেতা

নাজমুল হুসাইন: রমজানের আগে সব পণ্যের দাম ঊর্ধমুখী। চাল, মুদি, মসলা, মাছ, মাংস কিংবা সবজির বাজার কোনোখানেই স্বস্তি পাচ্ছেন না ক্রেতা। এখন চাল, চিনি, ডাল, ছোলা, রসুন, আদা, মাছ, মাংস ও সবজি কিনতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। আর প্রয়োজনীয় এসব পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা।

রমজানের আগে এ ঊর্ধ্বমুখী বাজার চলছে কোনো ধরনের তদারকি ছাড়াই। কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে; আবার কোনোটি বৃষ্টি বা বন্যায়। তবে বাস্তবতা দেখার কেউ নেই। ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, এখনও বাজারে এসব অজুহাতেই দাম বাড়ানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে মনিটরিংয়ের দিকে ভরসা করা যাচ্ছে না। যদিও  বাজার মনিটরিং জোরদার করে এখনও সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

এদিকে সরকারের সক্ষমতা বাড়াতে টিসিবিসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বাজার মনিটরিং জোরদার ও প্রয়োজনে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, প্রত্যেক পার্বণ উপলক্ষেই পণ্য নিয়ে পুঁজি সন্ধানী সিন্ডিকেটের শিকার হচ্ছেন ভোক্তারা। অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে বাজার অস্থির করে তুলছে। তবে সরকার সে বিষয়ে সঠিক তদারকি করছে না। এতে তারা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

তিনি বলেন, টিসিবিসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ভূমিকা না থাকায় ভোগান্তি আরও বাড়ে। এজন্য তাদের মনিটরিং কার্যক্রম ঢেলে সাজানো দরকার। যাতে তা বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভূমিকা নিতে পারে।

চালের দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে: বোরো ধান ঘরে তোলা শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে থেকে। এর মধ্যে বাজারে নতুন চাল আসছে। কিন্তু এখনও কমেনি দাম; উল্টো এবার ধানের দাম বেশি হওয়ায় নতুন চালের দাম কমার সুযোগ নেই বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের চালই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৮ টাকা কেজিতে। যার মধ্যে নাজিরশাইল ৫২-৫৮ টাকা কেজি। মাঝারি মোটা চাল ৪৬-৫০ টাকা, পাইজাম ৪৮-৫০ টাকা ও স্বর্ণা ৪২-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

চালের দাম কমার সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে নওগাঁর ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ চন্দ্র সাহা বলেন, এখনও দাম কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। এ বছর ধানের দাম প্রচুর। প্রতিমণ ধান কিনতে হচ্ছে প্রায় এক হাজার টাকা দিয়ে।

মুদিবাজারে রমজানের পণ্য ঊর্ধ্বমুখী: হঠাৎ করে বাজারে গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি ছোলা ও ডালের দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। এখন কেজিপ্রতি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৮ টাকায়। আর প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত। যা গত কয়েক মাস ধরেই স্থিতিশীল।

অপরদিকে মিল বন্ধ রেখে চলতি মাসের প্রথমদিকে চিনির দাম বাড়িয়েছিল দেশের কোম্পানিগুলো। যা আবার শবেবরাতের পর কমেছে। তবে খুচরা বাজারে প্রভাব নেই। বিভিন্ন বাজারে এখনও প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায়। সঙ্গে কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দামও।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি চিনি বিক্রেতা একরামুল হক বলেন, কয়েক দিন ধরে চিনির দাম বাড়তি থাকলেও এখন কমেছে। কিন্তু মিলের দাম বাড়ানোর কারসাজি শেষ; এখন খুচরা বাজারে বাড়তি দামে কেনা চিনিই বিক্রি হচ্ছে ইচ্ছেমত দামে।

রসুন-আদার দাম ২০ টাকা বেশি: মসলার বাজারে আমদানি করা রসুনের দাম অস্থিতিশীল। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত। এর প্রভাবে দেশি রসুনের দামও বাড়ছে। বাজারে দেশি রসুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১২০-১৩০ টাকা ও আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। সঙ্গে আদার দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। আর দেশি পেঁয়াজ ৩৫ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছ-মাংসের দুই বাজারই চড়া: দাম বাড়ার কাতারে পিছিয়ে নেই মাছ-মাংসের বাজারও। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। রমজান শুরুর পর এ দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন অনেকে।

রামপুরা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী নজরুল বলেন, বৃষ্টি হলে মাছের সরবরাহ ভালো থাকে। তবে পাইকারি বাজারে দাম কমে না। আগে থেকে সব ধরনের মাছ কিনতে দাম ২০ থেকে ১০০ টাকা বেশি পড়ছে।

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আসলে মাংসের দাম অনেক বেশি। সঙ্গে গরমের কারণে মাছের চাহিদাও বেশি। অনেক ক্রেতা রমজানের জন্য আগাম মাছ কিনছেন। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে।

অপরদিকে শবেবরাতের পর থেকেই মাংসের বাড়তি দাম কমেনি। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০-৬০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরবরাহ সংকটের অজুহাতে ঊর্ধ্বমুখী সবজি: সব ধরনের সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজিই এখন পাওয়া যাচ্ছে না। দামের কারণে বাজারে নতুন আসা কচুরমুখী, ঝিঙা, শজিনা কিনতে পারছেন না অনেকে। এসব সবজি প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে ৭৫-১০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে বাজারে ২০ টাকায় শুধু আলু কেনা যায়। বেগুন, টমেটো, পটোল, ঝিঙা, বরবটি ও অন্যান্য সবজি কিনতে হলে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ টাকা গুনতে হচ্ছে।

কলাবাগানের সবজি বিক্রেতা ফিজার বলেন, এবার সবজির দাম কিছুদিন চড়া থাকবে। কারণ বেশি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে অনেক স্থানে সবজির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতেই অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে। ফলে খুব তাড়াতাড়ি আর সবজির দাম কমছে না।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০