আইন মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতায় বিচার বিভাগ অকেজো হচ্ছে: প্রধান বিচারপতি

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইন মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতায় বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে এ বিষয়টি সরকারকে জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। সূত্র: বিডি নিউজ

ভ্রাম্যমাণ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিতের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের একটি আবেদনের শুনানিতে  রোববার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চের এ বক্তব্য আসে।

হাইকোর্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করায় এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে এসেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম।

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন উপস্থাপনের পর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চায়, দরখাস্তে তিনি ‘কী দেখাতে চেয়েছেন’। জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্টের ওই রায়ের পর মোবাইল কোর্ট চার দিন বন্ধ থাকায় দিনাজপুরে ৩৭টি বাল্যবিয়ে হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি তখন অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চান, ‘আপনি কি প্যারালাল কোর্ট চান?’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘না। ইমিডিয়েট ইফেক্টের জন্য। কোনো অপরাধ দমনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার জন্য এটা।’

প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট করে শাস্তি  দেবেন। আবার তার বিচার করবেন। এটা কোন বিধানে করবেন?’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘একজন দোষ স্বীকার করলেই তাকে সাজা দেওয়া হয়।’

প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, ‘আপনারা বাড়াবাড়ি করেছেন। বাড়াতে বাড়াতে এক মাইল নিয়ে গেছেন। বাকি শুধু ৩০২ (দণ্ডবিধিতে হত্যা মামলার ধারা)। একজন দোষ স্বীকার করলেই হয়ে গেলো?’ এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আগে পুরো মামলার শুনানি নিতে অনুরোধ করেন।

প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, ‘একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আইন কমিশন আছে। সেখানে একজন নামকরা অধ্যাপক আছেন। তার লেখা ভালো অনেক বই আছে। অথচ আপনারা তাদের পরামর্শ নেন না। আইন তো চিন্তাভাবনা করে করতে হয়। মিনিস্ট্রি থেকে একজন লিখে দিলো আর আইন হয়ে গেলো?

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনবিদ, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আইন করা উচিত। সবাই মিলে আইন করলে সে আইনটা হয় গ্রহণযোগ্য।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা প্রকাশ্যে আদালতে অনেক কিছু বলি। এটাতে অনেক অপব্যাখ্যা হচ্ছে। বিচার বিভাগ সরকারের বিপক্ষে নয়। বিচার বিভাগ সব সময় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে রায় দেয়।’

অ্যাটর্নি জেনারেলকে তিনি বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এটা আপনি সরকারকে জানাবেন সমাধানের জন্য।’

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এভাবে বললে হবে? এতে কি সমাধান হবে? এগুলো বললে সংবাদপত্রে বড় বড় অক্ষরে  হেডলাইন হবে। তাহলে কীভাবে সমাধান হবে?’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাকে জানিয়ে দিলাম সমাধান করার জন্য।’ তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সলিউশন তো হচ্ছে না।’

এরপর আদালত ২ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে ওই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে বলে।

তিনটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম  চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১১ মে এক রায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ১১টি ধারা-উপধারা অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে।

রায়ের সার-সংক্ষেপে হাইকোর্ট বলে, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের এসব ধারা মাসদার হোসেন মামলার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একই সঙ্গে সংবিধানের মৌলিক দুটি স্তম্ভ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির পরিপন্থী।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০