রুবাইয়াত রিক্তা: অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের আচরণ অনেক বেশি রহস্যময়। এখানে কোনো কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করার পরও সেই শেয়ারের দর কমে। আর টানা লোকসানে থাকা কোম্পানির দর বাড়ে। কোনো কোম্পানি দীর্ঘদিন উৎপাদনে নেই। তারপরও এসব কোম্পানির দর বাড়ছে। এ রকম গোলমেলে বাজারে এখন প্রতিদিন সূচকের পতন হচ্ছে। শেয়ারের দাম কমছে অস্বাভাবিকহারে। তারপরেও পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষের কোনো বিকার নেই। বাজার ইতিবাচক করার জন্য নেই কোনো উদ্যোগ। পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলোর জন্য বড় সমস্যা করপোরেট ট্যাক্স হার। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও তা কতটা কার্যকর হবে, এ নিয়ে চিন্তিত বিনিয়োগকারীরা। এজন্য সবাই বাজেট ঘোষণার অপেক্ষায় আছেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গতকাল সকাল থেকে সূচকের পতন শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত আর ইতিবাচক ধারায় ফিরতে পারেনি। দিনশেষে সূচক পড়েছে ৩৬ পয়েন্ট। এর মধ্যে বিএটিবিসির দর ৪২ টাকা কমার কারণে সূচক কমেছে ৭ পয়েন্ট, আইসিবির জন্য ৪ পয়েন্ট, ইসলামী ব্যাংকের জন্য ২ পয়েন্ট, স্কয়ার ফার্মার জন্য ১ পয়েন্ট সূচক পড়েছে। লেনদেন কমেছে ১৭৭ কোটি টাকা। ২০১টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। গতকাল গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর মধ্যে প্রকৌশল খাতে বেশি লেনদেন হয়েছে। মোট লেনদেনে এ খাতের অবদান ছিল ১৭ শতাংশ বা ৭১ কোটি টাকা। এরপরে বস্ত্র খাতে লেনদেন হয় ১৫ শতাংশ বা ৬৩ কোটি টাকা। আর্থিক খাত এবং ওষুধ ও রসায়ন খাত অবদান রাখে ১২ শতাংশ করে। ব্যাংকিং খাতে ছিল তীব্র মন্দা। প্রথম প্রান্তিকে অধিকাংশ ব্যাংক ভালো করলেও এ খাতের শেয়ারের দর স্থবির হয়ে আছে। ব্যাংক খাতে লেনদেন হয়েছে ১১ শতাংশ। সব খাতের দর নেতিবাচক থাকলেও তুলনামূলক পাট ও কাগজ খাতের দর ইতিবাচক ছিল। পাট খাতের তিন কোম্পানির মধ্যে দুটির দর বেড়েছে। এর মধ্যে নর্দার্ন জুটের দর বেড়েছে ৩৬ টাকা ৪০ পয়সা। সোনালী আঁশের বেড়েছে ১০ টাকা ৩০ পয়সা। কাগজ খাতের হাক্কানি পাল্পের দর বেড়েছে ৩ টাকা।
গতকাল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশের শেয়ারবাজারে প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগ ৩১ মার্চ, ১৭ শেষে দাঁড়িয়েছে ৭৫৪ কোটি টাকা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২১৪ কোটি টাকা। বিনিয়োগ বেড়েছে ৫৪০ কোটি টাকা বা ২৫২ শতাংশ। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৫৬ হাজার নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে এসেছে। এত সব ইতিবাচক খবর সত্ত্বেও বাজারের অবস্থান কেন ক্রমেই নিচে নামছে তার রহস্য ভেদ করা যাচ্ছে না। দুই মাস টানা মন্দা চলছে। কিন্তু কেন এ মন্দা? তারও সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বাজারকে ইতিবাচক করতে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
Add Comment