সাধারণত মাঝবয়সী বা তার বেশি বয়সের নারী-পুরুষ হাড়ের ব্যথায় ভুগে থাকেন। হাড়ে সংক্রমণ, রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতা বা ক্যানসারের কারণে ব্যথা হতে পারে।
ইনজুরি বা আঘাত; বিভিন্ন ধরনের খনিজ ও ভিটামিন, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি; হাড় ভঙ্গুর রোগ অস্টিওপেনিয়া, অস্টিওপরোসিস প্রভৃতি; শরীরের এক স্থানের ক্যানসার অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়া (স্তন, ফুসফুস, থাইরয়েড, কিডনি ও প্রস্টেটের ক্যানসার সাধারণত হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে); হাড়ের ক্যানসার, যা হাড়েই উৎপন্ন হয়; ৬. হাড়ে রক্ত সরবরাহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী রোগ যেমন সিকেল সেল অ্যানিমিয়া; অস্টিওমাইলাইটিস জাতীয় হাড়ের মারাত্মক ইনফেকশন; লিউকেমিয়া বা অস্থিমজ্জার ক্যানসার প্রভৃতি।
বসে থাকলে বা নড়াচড়া করলে অস্বস্তি লাগা; স্থানটি ফুলে যাওয়া, দৃশ্যমান ভাঙা বা অঙ্গবিকৃতি, আঘাতের স্থানে কট করে শব্দ হওয়া প্রভৃতি; মাংসপেশি ও টিস্যুতে ব্যথা; ঘুমের সমস্যা; পেশি কামড়ানো; অবসাদ ও দুর্বল লাগা; পিঠে ব্যথা, নুয়ে থাকা; সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন কমে যাওয়া; মাথাব্যথা, বুক ব্যথা; হাড় ভেঙে যাওয়া; খিঁচুনি, জন্ডিস; ছোট ছোট শ্বাস ফেলা; পেট ফুলে যাওয়া; ত্বকের নিচে প্লি অনুভব করা; ইনফেকশনের স্থানটি লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া ও গরম অনুভব করা, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য; ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ও রাতে ঘেমে যাওয়া ও হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া প্রভৃতি।
পরীক্ষা: ১. রক্ত পরীক্ষা; ২. ক্যানসার আছে কি না, নিশ্চিত হতে ক্যানসার মার্কার; ৩. হাড়ের এক্স-রে; ৪. এমআরআই; ৫. সিটি স্ক্যান প্রভৃতি।
চিকিৎসা: ব্যথানাশক: হাড়ব্যথা কমাতে সচরাচর ব্যথানাশক ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়। তবে এসব ওষুধ হাড় ব্যথার নির্দিষ্ট কারণগুলোকে সারিয়ে তোলে না। সাধারণভাবে আইবুপ্রফেন বা প্যারাসিটামল ব্যবহার করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক: হাড়ে ইনফেকশন থাকলে ইনফেকশন ঘটানোর জন্য দায়ী জীবাণুগুলোকে মেরে ফেলতে অ্যান্টিবায়োটিক যেমনÑসিপ্রোফ্লক্সাসিন, ক্লিন্ডামাইসিন বা ভ্যানকোমাইসিন দেয়া হয়।
পুষ্টি: অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় রোধে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’র মাত্রা ঠিক রাখতে পুষ্টির সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।
ক্যানসারের চিকিৎসা: ক্যানসারজনিত হাড়ের ব্যথার চিকিৎসায় সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি এবং কেমোথেরাপি রয়েছে। কেমোথেরাপি আবার হাড়ের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।
হাড় ব্যথা রোধে করণীয়: নিয়মিত ব্যায়াম করুন। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করুন। মদ্যপান ও ধূমপান পরিহার করুন। আক্রান্ত স্থানটিকে বিশ্রামে রাখুন। হাড় ক্ষয় বা হাড়ের অন্য কোনো রোগ হয়েছে কিনা, তা জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ
ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা