শরীফ ইকবাল রাসেল, নরসিংদী: আজ বাদে তিন দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। এই কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন নরসিংদীর কামার শিল্পীরা। এখন কামারশালায় কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন দগদগে লাল লোহার খণ্ডে। আবার কেউ শান দিচ্ছেন, কেউবা কয়লার আগুনে বাতাস করছেন। এভাবে নির্ঘুম রাত কাটছে কামার শিল্পীদের। তবে এবার কভিড পরিস্থিতিতে বিগত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে গেছে যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ।
এ ঈদে গরু, ছাগল ও উট কোরবানির পশু হিসেবে জবাই করা হয়ে থাকে। আর এসব পশুর মাংস কাটতে দা, বটি, ছুরি ও চাপাতির মতো ধাতব যন্ত্রপাতি অপরিহার্য। এসব সরঞ্জাম না হলে একবারে চলে না। এজন্য অনেক মানুষ ব্যতিব্যস্ত দা, বটি, ছুরি ও চাপাতি শান দিতে ও তৈরি করতে।
বিভিন্ন কামারশালা ঘুরে দেখা গেছে, দিন রাত টুংটাং শব্দে মুখর পুরো এলাকা। কোরবানির ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে কামারশালাগুলোয় ততই মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর এ সময় ভ্রাম্যমাণ কামাররা চষে বেরাচ্ছেন ছোট-বড় বিভিন্ন হাটবাজার ও গ্রাম থেকে গ্রামান্তর এবং শহরের মহল্লা থেকে মহল্লা। অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ কামারদের কাছে পেয়ে খুশি শহর ও গ্রামের মানুষ।
কোরবানিকে সামনে রেখে চাহিদা অনুযায়ী দা, বটি, ছুরি ও চাপাতি বেচাকেনার জন্য মজুত করে ঈদের সময় বাজারে ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়ে থাকে।
নরসিংদীর চরসিন্দুর বাজারের কামার শিল্পী অজিত কর্মকার জানান, কোরবানির ঈদ এলে এ পেশার মানুষদের একটু ব্যস্ততা ও কদর বাড়ে। অন্য সময় অলসভাবে কাটাতে হয়। এবার ঈদে বটি, দা, ছোট-বড় ছুরি ও চাপাতি তৈরিতে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি নেয়া হচ্ছে। আর তৈরি করা এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায়। গরু কাটার ছোট আকারের ছুরি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে গরু কাটার ছোট আকারের ছুরির চাহিদা একটু বেশি।
পলাশ উপজেলার কালীবাজার মোড়ে অবস্থিত কামারশালার কারিগর প্রদ্বীপ কর্মকার ও রঞ্জিত কর্মকার বলেন, দা আকৃতি ও লোহা ভেদে ২০০ থেকে ৩৫০, ছুরি ৫০ থেকে ২০০, চাকু প্রতিটি সর্বোচ্চ দেড়শ’, হাঁড় কোপানো চাপাতি প্রতিটি ৩০০ থেকে ৫০০ ও ধার করার স্টিল প্রতি পিচ ৫০ থেকে ২০০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। পুরোনো যন্ত্রপাতি শান দিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা নিচ্ছেন বলে জানান তারা।
জেলায় সব উপজেলায় কমবেশি এমন ব্যস্ততা চোখে পড়েছে। ছোট, বড় বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে শতাধিক কামারশালায় কামাররা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তবে লোহা জাতীয় সরঞ্জাম তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ও মজুরি বেশি হওয়ায় অনেকে এখন কামার শালা থেকে তৈরি না করে বাজার থেকে সাধারণ যন্ত্রপাতি কেনেন।