নিজস্ব প্রতিবেদক: এখনও সিটি করপোরেশনের অনুমতি পায়নি রাজধানীর অস্থায়ী কোরবানির পশুরহাটগুলো। তারপরও হাটের প্রতিটি স্থান ভরে গেছে কোরবানির জন্য নিয়ে আসা পশুতে। ঈদের দিনসহ পাঁচ দিন পশু বিক্রির অনুমতি দেয়া হবে। সেই হিসাবে আজ শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিক গরু বেচাকেনা শুরু হওয়ার কথা তার আগেই লোকজনে সরব হাটগুলো। গরু সংগ্রহও চোখে পড়ার মতো।
পরিবেশ দেখে বেপারিরা খুশি হলেও শঙ্কিত নগরবাসী। মহামারিতে হাটগুলোয় আদৌ স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে কি নাÑতা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। নগরীর বেশকটি অস্থায়ী পশুরহাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সকালে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মাঠে দেখা গেছে হাটের প্রতিটি খুঁটির সঙ্গে গরু বাঁধা। বেপারিরা তাদের পশুর পরিচর্যা করছেন। সে তুলনায় অবশ্য ক্রেতা ছিল না। দুয়েকজন ছিল পশুর দেখাশোনায়।
সকালে তীব্র রোদ থাকায় অনেককে ছাউনি বানিয়ে পশুকে ছায়ায় রাখার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। হাটের বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝে মধ্যে মাইকিংও করা হচ্ছে।
সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে কলোনির মাঠে হাঁটতে এসেছিলেন মাইমুনা আক্তারা। তিনি বলেন, ‘আজ বাচ্চাকে গরু দেখাতে এসেছি। পছন্দও করে যাব। কয়েকটি পছন্দ হয়েছে। পরে পরিবারের বাকিরা এসে দেখে কিনব।’
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বাহাদুর গ্রামের বেপারি আওশাদ বলেন, ‘১৬টি গরু নিয়ে এসেছি। শুক্রবার মাঠে ঢুকিয়েছি। এখন মানুষ শুধু দাম জিজ্ঞাস করে ছবি তুলে চলে যায়। কেউ কিনছে না। শনিবার থেকে বেচাবিক্রির অনুমতি আছে।’
তিনি আরও বলেন, ১৬টি গরুর মধ্যে ১০টি গরু তিনি কিনে এনেছেন। ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিটি গরুতে ১০-১৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। যে কারণে এবার দাম একটু বেশি পড়বে।’
মহামারির মধ্যে পশু নিয়ে বেশ চিন্তিত আওশাদ। বললেন, ‘কভিড তো অনেক ক্ষতি করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ। এবার কোরবানি দাতার সংখ্যাও কমতে পারে। তাই প্রকৃত দাম পাই কিনা সন্দেহ রয়েছে।’
পাবনার ব্যবসায়ী আরাফাত মিয়া বলেন, ‘সবে মাত্র গরু এনেছি। হাটের প্রতিটি বাঁশে গরু আছে। সে তুলনায় মানুষ নেই। মানুষ কিনবে শেষের দু’দিন। এখন শুধু দেখবে আর ছবি তুলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ১২টি গরু এনেছি। সব নিজের খামারের। সবচেয়ে বড়টার দাম তিন লাখ টাকা। আড়াই লাখ হলে ছেড়ে দেব। তবে ৮০ হাজারের নিচে কোনো গরু নেই আমার।’
একই চিত্র ঢাকা উত্তর সিটির সাঈদনগর পশুর হাটের। পুরো হাট পশুতে ভরা। কিছু গরু বিক্রি হতেও দেখা গেছে এখানে। তবে ক্রেতার চাপ কম। তাই স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানতে দেখা গেছে এই হাটে। প্রবেশপথে স্বেচ্চাসেবকরা ব্যস্ত ছিলেন মানুষকে সচেতন করতে।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘শনিবার ১৭ তারিখ থেকে গরু বিক্রি শুরু হবে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। সবাইকে তা মেনে চলার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘ডিএসসিসিতে এ বছর একটি স্থায়ীসহ ১১টি অস্থায়ী পশুরহাট বসবে।
৪৬টি শর্ত আছে। এগুলো মেনে হাট চালাতে হবে। এছাড়া হাটগুলোয় আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতও থাকবেন। তারা নিয়মিত মনিটরিং করবেন।’
এদিকে শুক্রবার গাবতলী পশুরহাট ঘুরে দেখা গেছে, ছোট গরুর দাম চড়া। পাঁচ মণ মাংস মিলবে এমন গরুর দামও এক লাখ ২৫ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। হাটে পর্যাপ্ত গরুও রয়েছে। ছোট গরুর বেপারিরা চড়া দামে গরু বিক্রি করছেন।
মুন্নাফ বেপারি গত মঙ্গলবার রাজবাড়ী থেকে ১৫টি ছোট থেকে মাঝারি গরু তুলেছেন হাটে। গরুগুলো থেকে মাংস মিলবে তিন থেকে চার মণ করে। প্রতিটি গরুতে আট থেকে ১০ হাজার টাকা করে লাভ করেছেন তিনি।
মুন্নাফ বেপারি বলেন, আল্লাহ দিলে ছোট গরুর দাম ভালো। এবার আশা করছি পেটে ভাতে হবে। গরুর দামও ভালো।
ছোট গরুর চড়া দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গো খাদ্যের দাম বাড়তি। এছাড়া বাড়তি দামে গৃহস্থের কাছ থেকে গরু কিনেছি। তবে হাট ঘুরে দেখা গেছে বড় গরুর চাহিদা কম। রংপুরের নূর শাহীন বেপারি এবার ৪টি বড় গরু হাটে তুলেছেন। তবে এখনও ক্রেতা পাননি তিনি। ১৩০০ কেজি মাংস পাওয়া যাবে এমন গরুর দাম হাঁকছেন ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা। নূর শাহীন বলেন, বড় গরুর চাহিদা কম। তবে দেখা যাক সামনে কী হয়।
মিরপুর শেওড়াপাড়া থেকে কোরবানির গরু কিনতে এসেছেন মতিয়ার রহমান। তিনি কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী। গরুর দাম প্রসঙ্গে মতিয়ার বলেন, গত বছরের থেকে গরুর দাম বাড়তি। বাজেটের সঙ্গে গরুর সাইজ মিলছে না। আট থেকে ১০ হাজার টাকা বাড়তি হলে মেনে নেয়া যায় কিন্ত ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বাড়তি দাম হলে মেনে নেয়া কঠিন। তিন মণ মাংস হবে না এমন গরুর দাম এক লাখ ৩০ বলছে। গত বছর এমন সাইজের গরু ৭০ হাজার টাকায় কিনেছি।
নগরীর স্থায়ী পশুরহাট গাবতলীর মূল হাটের স্থান সম্প্রসারিত হয়েছে। মূলত গরুর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে হাটের জায়গা বেড়েছে। তবে হাট কমিটির দাবি শুক্রবার থেকে বেচাকেনা স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও মূল বেচাকেনা হবে ১৯ ও ২০ জুলাই।
গাবতলীর গরু হাটের পরিচালক মো. রাকিব ইমরান বলেন, এখন যাদের বাড়িতে জায়গা আছে তারা গরু কিনছেন। তবে চূড়ান্তভাবে বেচাকেনা শুরু হবে ১৯ ও ২০ জুলাই। হাটে বেপারি ও ক্রেতাদের জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।