নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা মহামারিতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এ ঋণের অর্থের জোগান দিচ্ছে। এসব ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন না অনেকেই। এমন তথ্য পাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঋণের ব্যবহার জানতে সরেজমিন পরিদর্শন করার।
সূত্রমতে, করোনা মহামারির প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসমাগম কমাতে গতকালও বাণিজ্যিক ব্যাংক বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রের জরুরি চাহিদা মেটাতে পেমেন্ট সিস্টেম, ফরেইন এক্সচেঞ্জসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটি বিভাগ খোলা রাখা হয়েছিল গতকাল। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা গতকালও বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিস করেছেন। এই সময়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বিকাল ৩টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠকটি চলে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা। বৈঠকে তাদের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর-২ কাজী ছাইদুর রহমান। অনলাইনের মাধ্যমে বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ ও বিআরপিডি অন্যতম। বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারি উত্তর অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয় গত বছর। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত ঋণ নির্ভর হচ্ছে ১২টি। এসএমই, কৃষি ও বড় শিল্প খাতে এসব ঋণ বিতরণ করা হয়। শুধু এসএমই ছাড়া প্রায় সব ঋণই বিতরণ শেষ করা হয়েছে।
সম্প্রতি অভিযোগ উঠে এসব ঋণের অর্থ নিয়ে উদ্যোক্তাদের একটি অংশ ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করছেন না। গত ২৭ জুলাই শেয়ার বিজে ‘প্রণোদনার অর্থে আগের ঋণ শোধ করছেন ব্যবসায়ীরা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। মূলত তা ঋণ চুক্তি ও বিশেষ করে প্রণোদনা ঋণের ব্যবহারের নিয়মবিরুদ্ধ কাজ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, যে উদ্দেশ্য ঋণ নেয়ার কথা বলা হয়েছে, সেই কাজেই ঋণ ব্যবহার করতে হবে।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ঋণের অর্থ দিয়ে অনেকেই জমির প্লট, জমি, ফ্ল্যাট ক্রয়ে ব্যবহার করেছেন। কেউবা কারখানায় ব্যবহার না করে ট্রেডিংয়ের কাজে ব্যবহার করেছেন। কেউবা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে এফডিআর করেছেন তিন মাস থেকে এক বছরের জন্য।
অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পরে এ বিষয়ে ঋণের পুরো তথ্য সংগ্রহে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে সম্প্রতি। এতে সুনির্দিষ্ট ছকে এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক বিভাগ। এরপরই সরেজমিন তদন্তে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগগুলোকে আটটিতে উন্নীত করা হয়েছে। এসব বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় তথ্যর আদান-প্রদানের জন্য গতকাল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে।
বৈঠকের আলোচিত বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলামের কাছে। তবে আলোচিত বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। যদিও বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন।