মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: যশোরের তিনটি উপজেলার ছয়টি অঞ্চলের প্রায় ৪০০ মানুষের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষের দেহে করোনার প্রাকৃতিক ‘অ্যান্টিবডি’ পাওয়া গেছে। এর মানে এই ৩৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত বা এ ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টার এ গবেষণা পরিচালনা করে। মানুষের দেহ থেকে রক্তের নমুনা নিয়ে র্যাপিড অ্যান্টিবডি পরীক্ষা পদ্ধতিতে এ গবেষণা চালানো হয়। করোনার ডেল্টা ধরনের ঊর্ধ্বগতির ফলে মানুষের শরীরে করোনা প্রতিরোধের প্রকৃত হার জানতে এ ধরনের গবেষণার উদ্যোগ নেয় যবিপ্রবি।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বাড়িতে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে পজিটিভ করোনা রোগী ছিল, সেসব পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ৩৮ ভাগের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। আর করোনা পজিটিভ রোগী-সংশ্লিষ্ট বাড়ির পাশের করোনা পজিটিভবিহীন বাড়ির ২৪ ভাগ মানুষের মধ্যেও প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ‘অ্যান্টিবডি’ পাওয়া গেছে। গ্রামের তুলনায় শহরে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যান্টিবডির শতকরা হার কম। গবেষণায় ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের বাদ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া এত বেশি মানুষের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যান্টিবডি থাকা প্রমাণ করে যে, আমাদের চারপাশে করোনা উপসর্গহীন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। অধিক জনসংখ্যা ও মানুষের মাস্ক ব্যবহারের উদাসীনতাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য করোনা পজিটিভ মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
গবেষক দলটি গবেষণার নানা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা সংস্পর্শে আসায় তাদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তবে করোনা থেকে বাঁচতে বা ‘হার্ড-ইমিউনিটি’ তৈরির জন্য মানুষের শরীরে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ‘অ্যান্টিবডি’ থাকা আবশ্যক। তাই মানুষের শরীরে ‘অ্যান্টিবডি’র পরিমাণ বাড়াতে এবং প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যান্টিবডির স্থায়িত্ব কত দিন থাকবে, তা কোনো গবেষণায় প্রমাণিত না হওয়ায় করোনা থেকে বাঁচতে টিকা গ্রহণের বিকল্প নেই।
গবেষণার এ ফলের বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য ও জিনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, টিকা না নিলে আরও দীর্ঘদিন আমাদের এই মহামারিতে ভুগতে হবে। তিনি মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি বাড়ানোর জন্য সরকারের গণটিকাদানের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।
যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীরের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় এই ‘অ্যান্টিবডি’ শনাক্তকরণ। গবেষক দলের সদস্যরা হলেন পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী পিপাসা সুলতানা, সুরাইয়া ইয়াসমিন, লক্ষ্মী সরকার এবং পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী নওশাদ মাহমুদ চয়ন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনা-আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আটজন। গতকাল শুক্রবার করোনা শনাক্তের হার ছিল ২৫ শতাংশ। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আরিফ আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হাসপাতালের রেড জোনে গতকাল ভর্তি রয়েছেন ৯৩ জন এবং ইয়েলো জোনে ২৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রেড জোনে ভর্তি হয়েছেন ২৪ জন এবং ইয়েলো জোনে ১৪ জন।
এদিকে গতকাল যবিপ্রবি জিনোম সেন্টারে ৩৬৫ নমুনা পরীক্ষা করে ৯২ জনের কভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ২৫ শতাংশ।