নিজস্ব প্রতিবেদক: সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোয় ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। বিপরীতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। প্রায় চারগুণ বেড়ে কাঁচামরিচের কেজি ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কিছুটা বেড়েছে চালের দাম। তবে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ১৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগি ও লাল লেয়ার মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের মতো লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। আর সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়। এর সঙ্গে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস আগের মতোই ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমার বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী বলেন, কোরবানির কারণে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কমে গেছে। এছাড়া লকডাউনের কারণে হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোর বিক্রি কমেছে। সবকিছু মিলে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, বাসাবাড়ির তুলনায় হোটেল-রেস্টুরেন্টের জন্য ব্রয়লার মুরগি বেশি বিক্রি হয়। লকডাউনের কারণে হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো মুরগি কেনার পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিয়েছে। আবার বিয়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানও এখন হচ্ছে না। এসব কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। লকডাউন উঠে গেলে হয়তো ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যেতে পারে। ডিমের দাম বেড়েছে। লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে থেকে ১০০ টাকায়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের দাম বেড়ে ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে হাঁসের ডিমের ডজনে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। সোনালি (কক) মুরগির ডিমের ডজন আগের দামে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচের দাম এক লাফে বেড়ে হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। ব্যবসায়ীরা এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচামরিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন, গত সপ্তাহে এক পোয়া কাঁচামরিচ ছিল ১৫ টাকা। কাঁচামরিচের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী
বলেন, বৃষ্টিতে মরিচের ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। অনেকের মরিচ গাছ পানিতে পচে গেছে। মরিচের দাম বাড়ার এটাই একমাত্র কারণ। বৃষ্টির এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে মরিচের দাম আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতো এখনও সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গাজর ও টমেটো। মানভেদে গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকায়। আর পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। করলার কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। আগের মতো ঢেঁড়সের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। বরবটির কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।
সবজির দামের বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী বলেন, কোরবানির ঈদের পর সবজির চাহিদা খুব কম ছিল। কয়েক দিন ধরে সবজির চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বাড়লেও সবজির দাম নতুন করে বাড়েনি। সব ধরনের সবজি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৮০ টাকায়। মৃগেলের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। পাবদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকায়। পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকায়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, রসুনের কেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকা, আদার দাম ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। হলুদ ১৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনির প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা। এছাড়া প্যাকেট চিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা, মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৪ টাকা, পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। গত সপ্তাহে মোটা চলের কেজি ছিল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৭ থেকে ৭০ টাকায়, পোলাওর চাল আগের দামেই ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে একজন চাল ব্যবসায়ী বলেন, সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। কভিড মহামারির কারণে এবারের মৌসুমে চালের দাম বেড়েছে। ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সিন্ডিকেট। সরকার যদি প্রতিদিন চালের বাজার মনিটর করতে, তাহলে দাম বাড়ত না। চালের দাম বাড়ার কারণে যদি সরকারি একটি-দুটি রাইস মিল বন্ধ করে দিত, তাহলে হঠাৎ চালের দাম বাড়াতে পারতেন না মিল মালিকরা।
