নিজস্ব প্রতিবেদক: আধা প্রস্তুত করা সিনোফার্মের টিকা পূর্ণ প্রস্তুত ও বিতরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ও চীনের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড-সিনোফার্মের সঙ্গে এক ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, চীন থেকে পাঠানো বাল্ক পরিমাণে উৎপাদিত আধা প্রস্তুত টিকা পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত ও বিতরণের কাজ হবে বাংলাদেশে। গতকাল রাজধানীর মহাখালী বিসিপিএস মিলনায়তনে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অনুষ্ঠানে চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিন বাংলাদেশে যৌথভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যে সিনোফার্মের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ইনসেপ্টা ভ্যাকসিনের পক্ষে সমঝোতা স্বাক্ষর করেন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডর চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির।
সিনোফার্মের চেয়ারম্যান লিউ জিংযান বেইজিং থেকে যুক্ত হয়ে বলেন, সিনোফার্ম ৩ বিলিয়নেরও বেশি পরিমাণে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করেছে।
সিনোফার্মের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত চীনের প্রথম টিকা। সিনোফার্ম বিশ্বের ৮৭টি দেশে টিকা পাঠিয়েছে। ৬০টির বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা সিনোফার্মের টিকা নিয়েছেন। এ টিকা করোনাভাইরাসের নানা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে কার্যকর।
তিনি বলেন, ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশে করোনা পরিস্থিতি সামলানো একটু কঠিন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। সেই লক্ষ্যে সিনোফার্ম ১ কোটি ৩০ লাখের মতো টিকা বাংলাদেশে সরবরাহ করেছে এবং আরও ৯০ লাখ ডোজ সরবরাহের জন্য প্রস্তুত আছে। সব মিলিয়ে সিনোফার্ম বাংলাদেশকে ৬ কোটি ডোজ টিকা দেবে।
তিনি আরও বলেন, একই সময় আমরা ইনসেপ্টার সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছি, যেখানে স্থানীয়ভাবে আধা প্রস্তুতকৃত উপাদান থেকে মূল টিকা প্রস্তুত এবং সরবরাহ করা হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশে মাসে ৫০ লাখ টিকা প্রস্তুত ও সরবরাহ করা হবে।
ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির বলেন, এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এক নতুন দ্বার উš§ুক্ত হলো। আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না কবে নাগাদ উৎপাদন শুরু করতে পারব। কারণ এখানে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় আছে এবং উৎপাদনের পর সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার বিষয় আছে। তবে আমরা শিগগির উৎপাদনে যাব বলে আশাবাদী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তিন পক্ষের চুক্তি হয়েছে। চীন থেকে বাল্ক ভ্যাকসিন আসবে, এখানে উৎপাদন করবে। এখানে টিকা ফিল ফিনিশ করবে ইনসেপ্টা, এই চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে আমরা আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইনসেপ্টা বাংলাদেশে টিকা তৈরি করতে পারবে।
তিনি বলেন, ইনসেপ্টার অনেক সক্ষমতা। যদি ১০ ডোজের ভায়াল হয় তারা চার কোটি ডোজ মাসে তৈরি করতে পারবে। আর যদি ভায়াল ছোট হয় তাহলে আরও কম হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কবে নাগাদ উৎপাদন করতে পারবে। আমাদের জানিয়েছে, মাস তিনেকের মধ্যে করতে পারবে। কারণ ইনসেপ্টার প্রস্তুতির বিষয় আছে। চীন থেকে বাল্কে আনতে হবে, সব মিলিয়ে এ সময় লাগতে পারে। তার আগেও হতে পারে কিংবা একটু বেশি সময় লাগতে পারে।’
টিকার দাম প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, দামের বিষয় এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। যখন উৎপাদনে যাবে তখন আলোচনা করে একটা দাম নির্ধারণ করা হবে। বাইরে থেকে আনতে যে দাম প্রয়োজন হয়, তার থেকে অবশ্যই কম পড়বে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সরকার বিদেশ থেকে অনেক টাকা দিয়ে টিকা কেনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি বিনা খরচে জনগণকে দেয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং প্রমুখ।
এছাড়া চীনের বেইজিং থেকে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কাউন্সেলর জিরং, সিনোফার্মের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ফু কুয়াং, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামানসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।