৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রোস্টেট ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ থাকে না। তবে ধীরে ধীরে প্রোস্টেট ক্যানসার বড় হয়ে গিয়ে যখন মূত্রনালিকে আক্রান্ত করে, তখন বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। এর মধ্যে প্রস্রাবের গতি কমে যাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের চাপ হলে প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, প্রস্রাব সম্পূর্ণভাবে না হওয়া বা অসম্পূর্ণ প্রস্রাব নির্গত হচ্ছে বলে অনুভূত হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, বীর্যের সঙ্গে রক্ত যাওয়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এই ক্যানসার আরও বেশি বেড়ে গেলে মেরুদণ্ডের হাড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তখন হাড়ে ব্যথা অনুভূত হয়, কখনও কখনও আক্রান্ত হাড় ভেঙেও যেতে পারে।
এখানে বলে রাখা ভালো, এসব উপসর্গ দেখা দিলেই যে প্রোস্টেট ক্যানসার হয়েছে, এমনটি ভাবাও ঠিক নয়। কারণ প্রোস্টেট ক্যানসার ছাড়াও আরও অনেক অসুখে এমন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
সাধারণত পিএসএ বা প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে প্রোস্টেট ক্যানসার নির্ণয় করা হয়। এছাড়া ডিজিটাল রেকটাল এক্সামিনেশন (ডিআরই) করে প্রোস্টেট ক্যানসার এবং এর আশপাশের বিস্তৃতি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন চিকিৎসক। ট্রানসরেকটাল আলট্রাসনোগ্রাফি, যাকে সংক্ষেপে বলা হয় টিআরইউএস, এর মাধ্যমে আরও ভালোভাবে প্রোস্টেট ক্যানসারের ছবি দেখা যায় এবং এই ছবিতে প্রোস্টেট গ্রন্থিতে সন্দেহজনক কোনো টিউমার পাওয়া গেলে সেখান থেকে বায়োপসি করে টিস্যু নিয়ে মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করে প্রোস্টেট ক্যানসার নিশ্চিত করা হয় এবং এর ধরন সম্পর্কেও জানা যায়। এ ছাড়া ক্যানসার নির্ণীত হলে আরও কিছু পরীক্ষা, যেমন সিটিস্ক্যান, এমআরআই, ফুল বডি আইসোটোপ বোন স্ক্যান, পিএসএমএ স্ক্যানের মাধ্যমেও প্রোস্টেট ক্যানসারের পর্যায় নির্ধারণ করা হয়। পর্যায় নির্ধারণ করার পরই মূলত পর্যায় অনুযায়ী প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়।
চিকিৎসা: প্রোস্টেট ক্যানসারে অস্ত্রোপচার বা রেডিক্যাল প্রস্টেটেকটমি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপিÑসবকটিরই ভূমিকা রয়েছে। এর মধ্যে কোনটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করে ক্যানসারের পর্যায়ের ওপর। তবে সঠিকভাবে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে পারলে প্রোস্টেট ক্যানসারের রোগী দীর্ঘদিন ভালো থাকতে পারে। বাংলাদেশেই প্রোস্টেট ক্যানসারের সব ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি সহজলভ্য।
কাজেই কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে বা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়লে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ডা. আরমান রেজা চৌধুরী
কনসালট্যান্ট, রেডিয়েশন অনকোলজি
এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা