ডিএসইর রাজস্ব ও সক্ষমতা বেড়েছে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার কারণে সূচকের পাশাপাশি বাড়ছে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। একইভাবে বাড়ছে বাজার মূলধনও। এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজার থেকে রাজস্ব আদায় বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। লেনদেনে ৪০ টাকা বেড়ে নিয়মিত গড়ে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা উত্তীর্ণ হয়েছে। চার লাখ কোটি টাকার বাজার মূলধন এখন বেড়ে ছয় লাখ কোটি টাকার দিকে যাচ্ছে। সবমিলে ডিএসইর সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিদায়ী অর্থবছরে (২০২০-২১) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে রাজস্ব আদায় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এ সময় ডিএসই থেকে মোট রাজস্ব আদায় হয় ২৬৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর আগের বছর এখান থেকে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ডিএসই থেকে রাজস্ব আদায় বেড়েছে প্রায় ১৫৪ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে যা হয় ১৩৬.৫১ শতাংশ।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাজস্ব বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ লেনদেন বেড়ে যাওয়া। তাদের অভিমত দীর্ঘদিন থেকে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ কারণে এখানে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি বেড়েছে। ফলে লেনদেনও বেড়েছে। আর লেনদেন বেড়ে যাওয়ার কারণে রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে।

এদিকে রাজস্ব বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের সক্ষমতা। করোনাভাইরাস দেখা দেয়ার পর লেনদেন ৪০ কোটি টাকায় নেমে যায়। এ সময় প্রায় প্রতিদিনই নি¤œমুখী ছিল সূচক। অথচ ২০১০ সালে ডিএসইতে লেনদেন তিন হাজার কোটি ছাড়িয়ে যায়। সর্বোচ্চ লেনদেন গিয়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ২৪৯ কোটি টাকায়। পরে ধসের কারণে লেনদেন কমতে শুরু করে। লেনদেন ঘুরপাক খেতে থাকে ৩০০ কোটি টাকার নিচ থেকে ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে। কালেভদ্রে লেনদেন কিছুটা বাড়লেও তা স্থির থাকতে পারেনি।

পরবর্তীকালে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর লেনদেন আরও কমে যায়। ৪০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে লেনদেন। এতে রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যহারে কমে যায়। পরে নতুন কমিশন ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। এরপর থেকে রাজস্ব আদায় বাড়তে শুরু করে। বাড়তে থাকে হাউস মালিকদের আয়ও। এখন নিয়মিত গড় লেনদেন হচ্ছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০১০ সালের একদিন লেনদেন তিন হাজার কোটি টাকার বেশি হলেও নিয়মিত গড় লেনদেন ছিল ৮০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা। এর মধ্যেও বাজার স্থিতিশীল ছিল না। তবে এখন ভালো লেনদেনের পাশাপাশি বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বাজার মূলধন বর্তমানে, যা রেকর্ড পর্যায়ে রয়েছে।

সর্বশেষ গতকাল ডিএসইকে লেনদেন হয় দুই হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। বাজার মূলধন গিয়ে দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায়। আর সূচকের অবস্থান ছিল ছয় হাজার ৪৬২ পয়েন্ট।

এ বিষয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজার ভালো থাকলে ভালো লেনদেন হলে সার্বিক বাজার চিত্রই ভালো থাকবে। সবদিক থেকে ভালো খবর শোনা যাবে। এখন সবদিক দিয়ে বাজার ভালো অবস্থায় রয়েছে। তবে বাজারের গভীরতা বাড়ানোর জন্য আরও ভালো শেয়ার দরকার।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে হাউস মালিকরা জানান, এক বছর আগেও তাদের হাউস পরিচালনা করতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছিল; কারণ তাদের প্রধান আয় শেয়ার লেনদেন থেকে প্রাপ্ত কমিশন। ফলে লেনদেন কমে গেলে তাদের আয়ও কমে যায়। লেনদেন তলানিতে নেমে যাওয়ায় তাদের অবস্থা হয়েছিল আরও করুণ। উপায় না পেয়ে অনেক মালিক তাদের অন্য ব্যবসা থেকে অর্থ এনে হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিয়েছেন। তবে এখন তাদের অবস্থা বেশ ভালো। লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় তাদের এখন হাউস পরিচালনা করতে তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের আয় বেড়ে যাওয়ায় ডিএসইর রাজস্ব আদায় বেড়েছে। মূলত লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় পুঁজিবাজারের চিত্র বদলে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। এর প্রভাবে রাজস্ব আদায় আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।

এদিকে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি যেমন রয়েছে, এমন পরিবেশ থাকলে ভবিষ্যতে রাজস্ব আদায় আরও বাড়বে। তবে এর জন্য বাজার ভালো থাকা জরুরি।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা বলেন, কিছু লোক সব সময় পুঁজিবাজার নিয়ে কারসাজি করে। আর এর মাশুল দিতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারী ও আমাদের। পাশাপাশি বাজার খারাপ হলে আমাদেরই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়, কারণ আমাদের আয় কমে গেলেও খরচ কমে না। এই খরচ জোগাড় করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। এ কারণে বাধ্য হয়ে অনেক সময় আমাদের কর্মী ছাঁটাই করা ছাড়া উপায় থাকে না। তাই ঊর্ধ্বমুখী বাজারে কোনো কারসাজি হচ্ছে কি না, সেদিকে চোখ রাখা জরুরি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০