নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এমনিতে বেশ নাজুক। কভিড-১৯ মহামারি সে সংকট আরও গভীর করে তুলেছে। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে গর্ভধারণকারী মায়েদের। কভিডকালে তাদের সুরক্ষা ও এ সময় বাবাদের দায়িত্বের বিষয়টি ওঠে এসেছে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে।
গতকাল ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল) ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএইচআরএফ) যৌথ আয়োজনে হওয়া ‘করোনাকালে মাতৃস্বাস্থ্য এবং বাবার দায়িত্ব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা মাতৃস্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। এতে প্রাধান্য পেয়েছে বাংলাদেশে মাতৃস্বাস্থ্যের নানা ঝুঁকি, মাতৃত্বকালীন সন্তানের বাবা ও পরিবারের দায়িত্ব, মাতৃদুগ্ধের গুরুত্ব এবং কভিডকালে প্রসূতিসেবার সংকটগুলো।
বিএইচআরএফের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রাব্বির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল।
ওয়েবিনারে মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মুরাদ আহমেদ। এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও যোগ দেন ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেডের (ইউসিএল) করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান শামীমা আক্তার, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।
ওয়েবিনারে অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্য সমস্যার প্রতি আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ‘করোনা ও লকডাউনের কারণে নি¤œআয়ের পরিবারগুলোতে মাতৃস্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি যেমন বাবারা কর্মহীন হওয়ায় তারা সন্তানের মায়ের যথাযথ যতœ নিতে পারছেন না। মাতৃস্বাস্থ্যের গুরুত্বের বিষয়টি এই সময়ে আরও বেশি করে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাবাদের উচিত মাতৃত্বকালীন সময়ে সন্তানের মায়েদের প্রতি আরও যত্নবান হওয়া ও মায়েদের কাজগুলো ভাগ করে নেয়া। একই সঙ্গে মা ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও বাবাকে ভাবতে হবে। কভিড-১৯ সময়ে এ বিষয়টিও নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রথমবার গর্ভধারণ করা অধিকাংশ মা-ই কিশোরী। মা হতে গিয়ে তাদের যে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে হয় তা পরিবারের অন্য সদস্যরা ভাবেন না। প্রসবকালীন ঠিক সময়ে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ার ফলে দেশে মাতৃমৃত্যুর ৫৪ শতাংশ ঘটে বাড়িতে। করোনাকালে মায়েদের সেবাকেন্দ্রে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা আরও বেড়েছে। পরিবার ও সন্তানের বাবার সহযোগিতা ছাড়া এই সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের এখন এক সামাজিক যুদ্ধে নামতে হবে।’
ডা. মুরাদ আহমেদ তার প্রেজেন্টেশনে মাতৃস্বাস্থ্যের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, মায়েদের অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা ও বাল্যবিবাহের মতো সংকট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নারীরা গর্ভকালীন সময়ে এমনিতেই অপুষ্টিতে ভুগেন। এর সঙ্গে করোনাকালে যোগ হয়েছে বাল্যবিবাহের বাড়তি ঝোঁক। অল্প বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের ভাবতে হবে। আশার বিষয় হচ্ছে মায়েরা এখন চাইলে কভিড-১৯ টিকা নিতা পারছেন। সর্বোপরি মাতৃত্ব নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেয়া চলবে না।’
অনুষ্ঠানে ইউসিএলের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান শামীমা আক্তার বলেন, ‘‘করোনাকালে মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা ও মায়ের সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার কথা ভেবেই বিএইচআরএফকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই ওয়েবিনারের উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া মাতৃদুগ্ধপান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও উৎসাহ তৈরি করতে ‘হরলিক্স মাদার’স প্লাস’ ইতোমধ্যে মাসব্যাপী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে। দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা তৈরি করতে আমাদের এসব পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।”
মাতৃস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এ ওয়েবিনার আয়োজন করায় বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ তার বক্তব্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও ফোরামের সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান।