রহমত রহমান: বড় কোম্পানি থেকে প্রতি বছর ভ্যাট আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ), মূল্য সংযোজন কর। ভ্যাট সেবা বৃদ্ধি ও তদারকি বাড়ানোর ফলে এসব কোম্পানি থেকে ভ্যাট বাড়ছে। বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছর এলটিইউ রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৯ হাজার ২৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ কোম্পানি থেকে আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা (ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, আবগারি শুল্ক ও সারচার্জ)। অর্থাৎ এলটিইউয়ের আদায় করা ভ্যাটের ৭৭ শতাংশই জোগান দিয়েছে শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠান। বাকি ১০০টি প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় হয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। তবে এলটিইউতে থাকা ১১০টি প্রতিষ্ঠান তদারকিতে এলটিইউয়ের সক্ষমতা বাড়ানো হলে ভবিষ্যতে ভ্যাট আদায় আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছর এলটিইউ’র লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৭ হাজার ৫২৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৯ হাজার ২৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় হয়েছে ৭২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠান দিয়েছে ৩৮ হাজার ১১১ কোটি টাকা। বাকি ১১ হাজার ১৪০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা দিয়েছে ১০০টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বিদায়ী অর্থবছর এনবিআর মোট ভ্যাট আদায় করেছে ৯৭ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ১০টি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট আদায় করা ভ্যাটের ৪০ শতাংশ জোগান দিয়েছে। ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (জেটিআই) ও পেট্রোবাংলার থেকে ভ্যাট আদায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় কমেছে।
সূত্র আরও জানায়, এলটিইউতে বরাবরের মতো বিদায়ী অর্থবছরও সবচেয়ে বেশি ভ্যাট দিয়েছে বহুজাতিক সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাত কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)। এ কোম্পানি থেকে ভ্যাট আদায় হয় ২৪ হাজার ৯১১ কোটি টাকা; যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট দিয়েছে ৪ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা; যা এর আগের বছরের চেয়ে ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায়ী অর্থবছর ভ্যাট আদায় হয়েছে দুই হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা, যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি।

ভ্যাট প্রদানে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকারী কোম্পানি জেটিআই। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায়ী অর্থবছর ভ্যাট আদায় হয়েছে দুই হাজার ৯ কোটি টাকা; যা এর আগে অর্থবছরের চেয়ে ২৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায়ী অর্থবছর ভ্যাট আদায় হয়েছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩০ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায়ী অর্থবছর ভ্যাট আদায় হয়েছে ৬৫৫ কোটি টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।
সপ্তম অবস্থানে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক লিমিটেড। এই ব্যাংক থেকে বিদায়ী অর্থবছর ভ্যাট আদায় হয়েছে ৫৭৯ কোটি টাকা; যা এর আগের বছরের চেয়ে ২৩৯ শতাংশ বেশি। অষ্টম অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায়ী অর্থবছর ভ্যাট আদায় হয়েছে ৫৭৮ কোটি টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম। নবম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায়ী অর্থবছর ভ্যাট আদায় হয়েছে ৫৪০ কোটি টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। আর দশম অবস্থানে রয়েছে ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায়ী অর্থবছর ভ্যাট আদায় হয়েছে ৫১০ কোটি টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি।
এলটিইউ’র হিসাবে দেখা গেছে, বিদায়ী অর্থবছর ১০টি খাত থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৪৬ হাজার ৩৪৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সিগারেট খাত থেকে ২৬ হাজার ৯২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। মোবাইল খাত থেকে আদায় হয়েছে ৮ হাজার ৪৬৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা, যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। ওষুধ খাত থেকে আদায় হয়েছে তিন হাজার ১৩২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি। ব্যাংক খাত থেকে আদায় হয়েছে দুই হাজার ৯৫৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি।
বিদ্যুৎ খাত থেকে আদায় হয়েছে এক হাজার ৪৫৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি। গ্যাস খাত থেকে আদায় হয়েছে এক হাজার ৪১১ কোটি ৫১ লাখ টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ কম। সাবান খাত থেকে আদায় হয়েছে ৬৫৫ কোটি ১১ লাখ টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি। কোমল পানীয় খাত থেকে আদায় হয়েছে ৬৩৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি। সিমেন্ট খাত থেকে আদায় হয়েছে ৪২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। পানি সরবরাহ খাত থেকে আদায় হয়েছে ২৯১ কোটি ৯১ লাখ টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি।