প্রলেকটিন হরমোন কেন বাড়ে

কপাল ও চোখের পেছনে আমাদের মস্তিষ্কের ভেতর পিটুইটারি নামে ছোট্ট একটা গ্রন্থি আছে। আমাদের মাস্টারগ্ল্যান্ড, মানে হরেক রকম হরমোন নিঃসরণের চাবিকাঠি আছে এতে। এই গ্রন্থি থেকে আরও নানা রকম হরমোনের মতো নিঃসৃত হয় প্রলেকটিন হরমোনও, যা সন্তান জšে§র পর বুকের দুধ তৈরি ও নিঃসরণের জন্য দরকার হয়। নতুন মায়েদের রক্তে এই প্রলেকটিন হরমোনের মাত্রা বেশি থাকে। তাই বুকের দুধ পান করানো মায়েদের মাসিক বন্ধ থাকে বেশ কিছুদিন। এটাকে প্রাকৃতিক জš§নিয়ন্ত্রণও বলে, কারণ এ সময় মেয়েদের মাসিক হয় না, ডিম্বস্ফুটনও হয় না। ফলে আবার সন্তান ধারণের সম্ভাবনা কম থাকে।

কিছু কারণে বুকের দুধ পান করানো মা ছাড়াও কোনো মেয়ের যদি প্রলেকটিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, তবে দেখা দেয় বিপত্তি। সে ক্ষেত্রে সেই মেয়ের মাসিক বন্ধ বা অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে, ডিম্বস্ফুটন বন্ধ হওয়ার কারণে বন্ধ্যত্ব দেখা দিতে পারে, স্তনে টনটনে ব্যথা হতে পারে, এমনকি নতুন মায়েদের মতো দুধ বা তরল নিঃসৃত হতে পারে।

প্রলেকটিন হরমোন বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ হলো নানা ধরনের ওষুধ সেবন। অল্পবয়সী তরুণীদের যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে তাই যুক্তিযুক্ত কারণ থাকতে হবে। কারণ সাধারণভাবে ব্যবহার করা অনেক ওষুধই প্রলেকটিন হরমোন বাড়িয়ে দিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।

সাধারণ গ্যাস্ট্রিক বা বমির ওষুধ ডমপেরিডন থেকে শুরু করে ঘুমের ওষুধ, বিষন্নতার ওষুধ, মানসিক রোগের বেশ কিছু ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ভেরাপামিল, কখনও কখনও জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়িও প্রলেকটিন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়তে পারে বা স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হতে পারে। যদি ওষুধটি বন্ধ বা পরিবর্তন করা সম্ভব না হয় (যেমন অ্যান্টিসাইকোটিক), তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ওষুধ ছাড়া আর যে কারণে প্রলেকটিন হরমোন বাড়ে, তার একটি হলো পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার প্রলেকটিনোমা। পিটুইটারির এমআরআই করে এটি শনাক্ত করা হয়। সাধারণ প্রলেকটিনোমা ওষুধেই চিকিৎসা করা যায়। টিউমার অনেক বড় হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া মানসিক চাপ, অতিরিক্ত ব্যায়াম, থাইরয়েডের সমস্যা প্রভৃতি কারণেও এই হরমোন বাড়তে পারে।

প্রলেকটিন হরমোনের অসামঞ্জস্য নারীর অনিয়মিত মাসিক ও বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণ। অনিয়মিত বা বন্ধ থাকা মাসিকের ক্ষেত্রে আপনি কী কী ওষুধ সেবন করেন, অথবা গত কয়েক মাসে সেবন করেছেন, তা অবশ্যই চিকিৎসককে জানাতে হবে। পুরুষদের প্রলেকটিন হরমোন বাড়লে বন্ধ্যত্ব, শুক্রাণু গঠনে সমস্যা, যৌন মিলনে অপারগতা, স্তন থেকে তরল নিঃসরণ প্রভৃতি উপসর্গ হতে পারে।

ডা. তানজিনা হোসেন

সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি

গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০