নিজস্ব প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রুপের মালিকানাধীন হাসেম ফুড লিমিটেডের সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক কারণ উদ্ঘাটনের স্বার্থে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংগঠনের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান শ্রমিক নেতা শহিদুল্লাহ চৌধুরী।
তাদের অন্যান্য দাবি হচ্ছে, সেজান জুস কারখানায় শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী মালিকপক্ষ ও কর্তব্যে অবহেলার জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তি দিতে হবে। মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকদের আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশনা ও রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ক্ষতিপূরণের হার বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। ক্ষতিপূরণের একই হারে আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং কারখানা বন্ধ থাকা অবস্থায় কর্মহীন শ্রমিকদের মজুরি দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনটি কর্মসূচিও ঘোষণা করেন শহিদুল্লাহ। কর্মসূচিগুলো হচ্ছে সেজান জুস কারখানায় হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পাঁচ দফা দাবি এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার দাবিতে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর সারাদেশে জেলায় জেলায় শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর দায়ীদের শাস্তির দাবিতে ঢাকায় শ্রমমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি এবং জেলায় জেলায় ডিসির মাধ্যমে স্মারকলিপি দেয়া হবে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর রূপগঞ্জের কর্ণগোপে পাঁচ দফা দাবিতে শ্রমিক সমাবেশ হবে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সম্প্রতি সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর সেই পুরোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে বলে আমাদের আশঙ্কা। সে কারণে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ স্কপের পক্ষ থেকে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কমিটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করেছে। আমরা আগেই ঘোষণা করেছিলাম, সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে এ প্রতিবেদন ও সুপারিশ আমরা প্রকাশ করব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণে সেজান জুস কারখানায় নানা গুরুতর অসংগতি দৃশ্যমান হয়েছে যার দায় মালিকপক্ষ, অগ্নিনির্বাপণ কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার প্রশাসন, শ্রম দপ্তর ও কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর কোনোভাবে এড়াতে পারে না। বিশেষ করে ভবন নির্মাণে ত্রুটি, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বিধি অনুযায়ী পর্যাপ্ত না থাকা, প্রতিটি ফ্লোর তালাবদ্ধ করে রাখা, শিশু শ্রমিক নিয়োগ, মালিকপক্ষের শ্রম আইন ও বিধি মেনে না চলা, পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী পরিদর্শন কাজে অবহেলা, স্বল্প মজুরিতে কাজ করানো ও ট্রেড ইউনিয়ন না থাকা এ কারখানার অগ্নিকাণ্ডকে অনিবার্য করে তুলেছে। ফলে এ দায়িত্বে অবহেলা, শ্রম আইন তোয়াক্কা না করা, অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে এবং কারখানায় কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দেয়া নিশ্চিত না হলে দুর্ঘটনার নামে শ্রমিকের মৃত্যু ঘটতে থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রমিকনেতা নুর কুতুব মান্নান, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, রাজেকুজ্জামান রতন, সাইফুজ্জামান বাদশা, ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, চৌধুরী আশিকুল আলম, নঈমুল আহসান জুয়েল, আহসান হাবিব বুলবুল, সাকীল আক্তার চৌধুরী, শামীম আরা, আব্দুল ওয়াহেদ প্রমুখ।