চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট

পিআরএম ফ্যাশনের ২৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কেইপিজেডের প্রতিষ্ঠান মেসার্স পিআরএম ফ্যাশন প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বন্ড সুবিধার আওতায় বন্ডেড শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটে নিবন্ধিত হয়। এরপর কয়েক বছর ঠিকমতো চললেও ২০১৮ সালের শুরু থেকে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিতে আরম্ভ করে। অপরদিকে কোম্পানির পরিচালনার ব্যর্থতায় একের পর এক আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে একটা সময় প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেলেও অনাদায়ী রয়ে যায় ফাঁকি দেয়া ২৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব।

চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট সূত্রে জানা গেছে, নিরীক্ষা মেয়াদান্তে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্য, আমদানিকৃত কাঁচামাল, এক্সেসরিজ, মেশিনারিজ, অপ্রত্যাবাসিত রপ্তানি ও ধারকৃত মেশিনারিজের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ২৩ কোটি ৩৫ লাখ চার হাজার ৩৫৪ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট প্রতিষ্ঠানটিকে অনাদায়ী সরকারি রাজস্বের টাকা আদায়ের জন্য দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করেছে।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানির আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ কোম্পানিতে বিনিয়োগ, রপ্তানি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সামগ্রিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে চট্টগ্রামের বেপজা কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠনটির লিজ চুক্তি বাতিল করে। একই সঙ্গে বেপজা প্রতিষ্ঠানটির স্থাপনা, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য পণ্য ইনভেন্ট্রি ও মূল্য নিরূপণ করে নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এ সময় বেপজা কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটকে কাস্টমসের বকেয়া পাওনার বিষয়ে অবহিত করে। তারপর চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট প্রতিষ্ঠানটির অনিষ্পন্ন বার্ষিক নিরীক্ষণ ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে।

এ সময়ের রপ্তানি তথ্য পর্যলোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট ৮৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭৮ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হলেও প্রতিষ্ঠানের লিয়েন ব্যাংকের (ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড, চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখা) ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সর্বমোট ৭২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৩ মার্কিন ডলার মূল্যের রপ্তানি দেখানো হয়েছে। অপরদিকে অবশিষ্ট ১১ লাখ ৮২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার বা ১০ কোটি চার লাখ ১৬ হাজার

 ৩৯৪ টাকা মূল্যের রপ্তানির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বেপজা কেইপিজেড কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটির নিলামে প্রাপ্ত কাঁচামাল, এক্সেসরিজ, মেশিনারিজ, অপ্রত্যাবাসিত রপ্তানি ও ধারকৃত মেশিনারিজের সর্বমোট শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ২৪ কোটি ৬০ লাখ ১৬ হাজার ২১৮ টাকা এবং এসব পণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর ২৩ কোটি ৩৫ লাখ চার হাজার ৩৫৪ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মেয়াদে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত ফ্রেব্রিকস ও এক্সেসরিজ অবৈধ করে ২৩ কোটি ৩৫ লাখ চার হাজার ৩৫৪ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে, যা বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি-১৭ (ক) (খ) এবং লাইসেন্সি কর্তৃপক্ষ পালনীয় শর্তাবলির শর্ত-২ ও ৩ এবং কাস্টম আইন, ১৯৬৯-এর সেকশন ১৩(২),(৩),৮৬,৯৭ ও ৯৮ সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে, যা কাস্টমস আইন মোতাবেক দণ্ডনীয় অপরাধ এবং ফাঁকিকৃত রাজস্ব আদায়যোগ্য।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রাম কেইপিজেডের প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালে বন্ডেড প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম কয়েক বছর ঠিকঠাক চললেও ২০১৮ সালের পর থেকে রাজস্ব ফাঁকি দেয়া শুরু করে। একই সঙ্গে এ সময় বার্ষিক নিরীক্ষাও বন্ধ রাখে। শেষ দিকে কোম্পানির পরিচালনা ব্যর্থতায় প্রতিষ্ঠানটিও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি চালু থাকা অবস্থায় বৃহৎ অঙ্কের সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে, যা কাস্টমস আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই প্রতিষ্ঠাটিকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। তবে কেইপিজেডে তাদের অন্য প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০