বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেশে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এজন্য সরকারকে একটি ‘শিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটি’ গঠন করতে বলা হয়েছে। এ কমিটি সুপারিশ করবে কোন পর্যায়ে কোন স্তরের পাঠ্যসূচিতে ভাষণটি অন্তর্ভুক্ত হবে।

এ-সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে গতকাল বুধবার এ রায় দিয়েছেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ।

রুল শুনানিতে আবেদনকারী আইনজীবী বশির আহমেদ ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও মো. তাহিরুল ইসলাম।

অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন আদালত। তবে সেটি এসএসসি, এইচএসসি, না উচ্চশিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, সেজন্য একটি কমিটি করতে বলেছেন। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তা নির্ধারণ করতে বলেছেন।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। এখন এটা কোন পর্যায়ে হবে, কীভাবে হবে, সেটা একটা শিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটি নির্ধারণ করে দেবে। এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে কারা থাকবেন, সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে দিয়ে দেবেন লিখিত রায় বের হওয়ার আগেই। সরকার কমিটি গঠন করে দিলে এতে সংযোজন-বিয়োজন করে আদালত চূড়ান্ত করবেন। পরে রিটেন জাজমেন্টে যে সময়সীমা দেবেন সে অনুযায়ী তা করা হবে।’

২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদের করা রিট আবেদনে ৭ মার্চকে কেন ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

এ ছাড়া একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্থানে, যে মঞ্চে ভাষণ দিয়েছিলেন, যে স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল, সেই স্থানে মঞ্চ পুনর্নির্মাণ কেন করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে।

৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধুর ‘স্পিচ মোডের’ (তর্জনী উঁচিয়ে ভাষণের সময়কার ভঙ্গি) ভাস্কর্য নির্মাণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।

সেই রুলের শুনানিতে রিট আবেদনকারীর সম্পূরক আবেদনে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন।

সেইসঙ্গে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ৭ মার্চের ভাষণের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, জানতে চেয়ে রুল দেন। সে রুলটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাত কোটি বাঙালিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু।

ভাষণে তিনি ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

তার ওই ভাষণের ১৮ দিন পর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। ৯ মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পরাজিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই আত্মসমর্পণের দলিলে সই করে।

বিভিন্ন দেশের ৭৭টি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করেছে ইউনেস্কো।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০