ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে পুঁজিবাজার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দীর্ঘসময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে পুঁজিবাজার। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে একইভাবে বাড়ছে সব ধরনের শেয়ারদর। বিনিয়োগকারীরা বুঝে না বুঝে এসব শেয়ার ক্রয় করতে দ্বিধাবোধ করছেন না। এরই জের ধরে বাড়তে শুরু করছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত। ফলে ধীরে ধীরে ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে বাজার।

জানা গেছে, গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই ছিল ২০ দশমিক ২৫ পয়েন্টে, যা সপ্তাহ শেষে ২১ দশমিক ১৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পিই-রেশিও শূন্য দশমিক ৯১ পয়েন্ট। এই বিবেচনায় ধীরে ধীরে বাজার ঝুঁকির দিকে চলে যাচ্ছে। যদিও বিষয়টিতে নজর দিয়েছে বিএসইসি।

জানা গেছে, উচ্চ পিই-রেশিও বা শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতধারী কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজির ঘটনা ঘটছে কি না, সেদিকে নজর রেখেছে বিএসইসি কর্তৃপক্ষ। ৪০-এর বেশি পিই-রেশিও হওয়া কোম্পানিগুলোকে কোনো হাউস থেকে ঋণ দেয়া হচ্ছে কি না, সেদিকেও নজর রেখেছে কর্তৃপক্ষ। 

শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বিবেচনায় দীর্ঘদিন থেকে বিনিয়োগের অনুকূলে থাকার শীর্ষে রয়েছে ব্যাংক খাত। সপ্তাহ শেষে ব্যাংক খাতের পিই-রেশিও অবস্থান করছে ৭ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে। কিন্তু বিনিয়োগ উপযোগী থাকলেও চাহিদার ক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে রয়েছে খাতটি। সেই তুলনায় বেশি পিই-রেশিওধারী কোম্পানিতে বা খাতে বিনিয়োগকারীদের বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এই খাতের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত অবস্থানে করছে ১৩ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে।

এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৩১ দশমিক ২৩ পয়েন্টে, বস্ত্র খাতের ৪৭ দশমিক ৯৭ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ২১ দশমিক ২৭ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ১৭ দশমিক ০৭ পয়েন্টে, বিমা খাতের ২২ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে, বিবিধ খাতের ৩৩ দশকিম ৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। একইভাবে খাদ্য খাতের ৩৭ দশমিক ৮০ পয়েন্টে, চামড়া খাতের ১৪৫ দশমিক ০৬ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতের ২৯ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে, আর্থিক খাতের ২৮৭ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে, পেপার খাতের ৫২ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতের ১৫ দশমিক ০১ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাতের ২৮ দশমিক ১০ পয়েন্টে, সিরামিক খাতের ৩৮ দশমিক ২৬ পয়েন্টে এবং পাট খাতের পিই ৪৬ দশমিক ২৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই বাজারের লাগাম টেনে ধরা দরকার। তাদের মতে, সার্বিক বিবেচনায় বাজার ভালো থাকলেও কিছু কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত অনকে বেশি বেড়ে গেছে। যে কারণে এসব কোম্পানির শেয়ার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা বলেন, ২০১০ সালে বাজার দেখতে দেখতে অতিমূল্যায়িত হয়ে যায়। এখনকার বাজারে যদিও সেই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না, তারপরও সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। কারণ অতিমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করলে তার মাশুল এক সময় বিনিয়োগকারীকেই দিতে হয়।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসই) নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারির মধ্যে রেখেছি। কিন্তু আমরা একা সজাগ থাকলে চলবে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে বিনিয়োগকারীদের। তারা সতর্ক থাকলে আমাদের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হবে।’

প্রসঙ্গত, কোনো শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত ১৫-এর নিচে থাকলে সেই শেয়ারকে ঝুঁকিমুক্ত ধরা হয়। ২০-এর ওপরে পিই-রেশিও গেলে ধীরে ধীরে শেয়ার ঝুঁকিপূর্ণ হতে শুরু করে। আর ৪০-এর বেশি পিই হলে বিনিয়োগকারীদের সুবিধার জন্য সেই শেয়ারের ঋণ সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়। 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০