নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপরই ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এই সময়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। এরপর গত দেড় বছর দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
আজ রোববার থেকে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তবে ছাত্রাবাস খুলে দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মানতে হবে ১৪ নির্দেশনা।
হোস্টেল খোলার জন্য ১৪ নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। কভিড-১৯ ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নির্দেশনা মেনে ছাত্রাবাস খুলে দিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর মাউশির মহাপরিচালক সই করা নির্দেশনাটি গতকাল প্রকাশ করা হয়। নির্দেশনার কপি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পরিচালক বরাবর এবং সব আঞ্চলিক উপপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কভিড-১৯ অতিমারির কারণে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবারও স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রমে ফেরাতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাস চালুর ক্ষেত্রে কভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ বিষয়ে প্রদত্ত ১৪ নির্দেশনা হলো সকল সমাবেশ স্থানÑক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং, টিভি, স্পোর্টস রুম ও অন্যান্য রুম-পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। রান্নাঘর থেকে রুমগুলোতে সরাসরি খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে, একাধিক শিক্ষার্থী একই বিছানা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে, একসঙ্গে নামাজ, প্রার্থনা, সমাবেশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলতে হবে, আবাসিক শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে ওঠার আগে কভিড আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করে ফলাফল নেগেটিত হলে হোস্টেলে আসবে, হোস্টেলে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে, হোস্টেল, বাথরুম, টয়লেট, বেসিন, ড্রেন ইত্যাদি প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত করে রাখতে হবে, বাথরুম ফ্লোর শুকনো রাখতে হবে, সবাইকে ব্যক্তিগত সাবান, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত লকার অন্যান্য জিনিসপত্র পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে, ডাইনিং রুমে টেবিল, গ্লাস, প্লেট, চামচ, জগ ইত্যাদি সবসময় পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে, হোস্টেলে খাবার পানি ও খাদ্যসামগ্রী নিরাপদ রাখতে হবে, দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে, ডেঙ্গু সংক্রমণ ও এডিস মশা বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে, একজনের ব্যক্তিগত ব্যবহার সামগ্রী বা শিখন সামগ্রী ইত্যাদি অপরজন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং আবাসিক শিক্ষার্থী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারী ব্যতীত অন্য কেউ হোস্টেলে অবস্থান বা যাতায়াত করতে পারবেন না।
তবে সংক্রমণ বাড়লে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল শনিবার দুপুরে জামালপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আগামীকাল রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে প্রয়োজনে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে।
কভিড পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই হোস্টেলগুলোও বন্ধের ঘোষণা আসবে। তবে ভবিষ্যৎ শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণায় আনন্দে ভাসছে শিক্ষার্থীরা। আর দীর্ঘ বিরতির পর সন্তানদের লেখাপড়ায় ফিরে আসার খবরে স্বস্তিতে রয়েছেন অভিভাবকরা।