করোনাভাইরাসের প্রভাবে চট্টগ্রামে কমেছে বিনিয়োগ নিবন্ধন

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের কেন্দ্রভূমি চট্টগ্রাম। আর চট্টগ্রামে বন্দর সুবিধার সঙ্গে শিল্পাঞ্চল, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানিসহ অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। কিন্তু চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে দুই বছরে স্থানীয় বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে আগের দুই অর্থবছরের তুলনায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এতে সংকোচিত হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। আর বিনিয়োগ পরিস্থিতি এমন হলে অর্থনীতির অগ্রগতি শ্লথ হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্যমতে, দেশের প্রধানতম বন্দর ও বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রাম। এ শহরের বাণিজ্যিক কর্মচাঞ্চল্য বাড়ানোর জন্য স্থাপন করা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এগিয়ে চলছে দেশের প্রথম টানেলসহ অনেকগুলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। পাশাপাশি বিনিয়োগ সহায়ক মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর এবং চট্টগ্রাম বন্দর সক্ষমতা ও সুবিধা বাড়ানো কাজ চলছে। কিন্তু এত সম্ভাবনার পরও চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরের স্থানীয় বিনিয়োগ হয়েছে দুই হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা; যা আগের অর্থবছরের ছিল তিন হাজার ২২৭ কোটি টাকা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ছিল ছয় হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে কমেছে তিন হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা।

মাসভিত্তিক বিনিয়োগ নিবন্ধন অনুসারে, ২০২০ সালের জুলাই মাসে ৫২৩ কোটি, আগস্ট মাসে ৪৯ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১০৩ কোটি, অক্টোবরে ১৮৪ কোটি, নভেম্বরে ৬০ কোটি, ডিসেম্বরে ১৫ কোটি এবং ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ১০২ কোটি, ফেব্রয়ারি মাসে ৭০ কোটি, মার্চে ৬৮ কোটি, এপ্রিল মাসে এক হাজার ১৯৯ কোটি টাকা, মে মাসে মাত্র তিন কোটি টাকা ও জুনে ১০১ কোটি টাকা। আর ১২ মাসে মোট ১২১টি বিনিয়োগ প্রস্তাবনায় আট হাজার ৪১৪ জনের কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরের বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ১১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা; যা আগের অর্থবছরের ছিল ৭৩৫ কোটি ৬০ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৭২৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, যা ৯৮ দশমিক ৪১ শতাংশেরও বেশি।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিল্প, বাণিজ্য ও ট্রেডিং ব্যবসায় নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে চট্টগ্রামের শিপব্রেকিং, আবাসান, শিল্প, ভোগ্যপণ্যের বড় বড় ব্যবসায়ীরা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দরপতনের কারণে ধীরে ধীরে খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে থাকে। এর মধ্যে বড় বড় কয়েকটি গ্রুপ ব্যাংকে ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়। এর মধ্যে ব্যবসায়িক কারণে খেলাপি হয়ে পড়া ঋণের পাশাপাশি অন্য ঋণও রয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠায় রক্ষায় ব্যাংকগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। এখনও পর্যন্ত এসব বাণিজ্যিক বা শিল্পগ্রুপগুলোর অবস্থার উন্নতি হয়নি। এছাড়া চট্টগ্রামে গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং বন্দরসহ অবকাঠামোগত সংকট বিদ্যমান। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ অনুমোদনের জটিলতার কারণে অনেক সময় বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ঢাকার তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে পড়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নীতিনির্ধারকরা বিমাতাসুলভ আচরণ করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগ্রুপ সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, করোনার কারণে বিনিয়োগ কমেছে, এটা স্বাভাবিক। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো চট্টগ্রামের বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই আইনের সুশাসন, বন্দর সুবিধা, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অবকঠামোগত সুবিধা বাড়াতে হবে। যে বন্দরে মাত্র ৪০ হাজার কনটেইনার জমে গেলে বন্দর অচল হয়ে যায়, সেখানে কীভাবে বিনিয়োগ বাড়বে? ফলে গত ১০ বছরে বিনিয়োগ উল্টো কমেছে। এবারের বাজেটে লক্ষ করলাম

বে-টার্মিনাল নির্মাণে বরাদ্দ রাখা হয়নি কিংবা গত পাঁচ বছরের এ প্রকল্পে অগ্রগতিই হয়নি। শুধু শুনেই যাচ্ছি যে, বে-টার্মিনাল নির্মাণ হবে। এছাড়া মিরসরাইয়ে ইকোমিক জোন হচ্ছে। অথচ এই শিল্পজোনের পাশে বন্দর বা টার্মিনাল নির্মাণে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এখন বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তাদের নিজস্ব অর্থায়নে প্রাইভেট পোর্ট কিংবা জেটি নির্মাণ করার সক্ষমতা আছে। তাদের সেই সুযোগ দিতে হবে। মূলকথা হলো, বিনিয়োগ বাড়াতে হলে অবশ্যই আগে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে কাগজে-কলমে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেরই থাকবে। বাস্তবে চট্টগ্রাম হবে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০