শাবিপ্রবিতে কমেছে আত্মহত্যার ঝুঁকি কাজ করছেন সাইকোলজিস্ট

দেলোয়ার হোসেন, শাবিপ্রবি: গত একযুগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ১১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এ সময়ে ছেলেমেয়ে মিলিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে শ’খানেকের বেশি। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও কেন এ ঝুঁকি নিচ্ছেন তারা? তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের যথাযথ উদ্যোগের ফলে দায়িত্বরত কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের সহায়তায় আত্মহত্যার ঝুঁকি অনেকটাই কমে এসেছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২ আগস্ট প্রেমজনিত কারণে আত্মহত্যা করে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ছাত্রী ঝরনা, একই কারণে ২০১০ সালে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা সুলতানা এনি, ২০১১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সৈকত আল ইমরান, ২০১২ সালে শ্রীনিবারণ একই মিছিলের যাত্রী হন। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আর্কিটেকচার বিভাগের ছাত্র শাহারিয়ার মজুমদার, ২০১৬ সালের ৭ মে ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের ছাত্র বিশ্বজিৎ মল্লিক, ২০১৮ সালের ৩ জুলাই সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী মৃত্তিকা রহমান, ২০১৯ সালের ৩ আগস্ট ইঁদুর মারার বিষ ‘র‌্যাট কিলার’ খেয়ে আবাসিক হলের নিজকক্ষে আত্মহত্যা করেন বকুল চন্দ্র দাস। ২০২০ সালের ৫ আগস্ট এ মিছিলে যোগ দেন বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তোরাবি বিনতে হক। এরপর ২০২০ এর ১ অক্টোবর আত্মহত্যা করেন বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আছিয়া আক্তার।

চলতি বছর প্রথম আত্মহত্যার সূচনা ঘটে ৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার। ওইদিন আত্মহত্যার তালিকায় যুক্ত হন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র প্রত্যয়। এরপর সর্বশেষ ৬ মে রাতে নিজ বাড়িতে আম গাছে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে রসায়ন বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের ছাত্র আলমগীর কবীর।

কভিড-১৯ মহামারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষার্থী চরম হতাশা থেকে আত্মহত্যার ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকার ফলে মানসিক নানা ধরনের সমস্যায় ভোগাটা যেন স্বাভাবিক হয়েছে এ সময়। শিক্ষার্থীদের এমন সিদ্ধান্তের কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, এখন এ অবস্থায় সুস্থ থাকতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে শক্ত থাকা দরকার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট কর্তব্যরত থাকলেও সব শিক্ষার্থী সেভাবে আশানুরূপ সেবা নিচ্ছেন না কিংবা পাচ্ছেন না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। ফলে সরাসরি কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের কক্ষে এসে একান্তে নিজের মনের কথা বলতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে শিগগির কার্যকর সেবা দিতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় সার্বক্ষণিক চালু করা হয়েছিল “সাস্ট মনের কথা ফেসবুক পেজ। শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ ও নির্দেশনা পরিচালকের অধীনে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সেবাটি পরিচালনা হচ্ছে। এতে কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ফজিলাতুন্নেছা শাপলা। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী কারও মানসিক সমস্যা দেখা দিলে সরাসরি সম্ভব না হলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সাস্ট মনের কথায়  যোগাযোগের ফলে সার্বক্ষণিক মানসিকবিষয়ক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া এ মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় সর্বদা গোপনীয়তা রক্ষা করে সেবা দেয়া হচ্ছে।

কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ফজিলাতুন্নেছা শাপলা বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক সেবা দিতে প্রস্তুত আছি। শাবিপ্রবি সংযুক্ত যেকেউ এই প্ল্যাটফর্মে আমাদের কাছে মানসিক সমস্যাজনিত প্রশ্ন রাখতে পারেন। আমরা শিগগির সাড়া দেয়াসহ মানসিক সমস্যার সেবাদানে কাজ করব।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের এ সংকটকালে আমাদের একধরনের মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে এ মানসিক সমস্যা বেশি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সবার বিষয় চিন্তা করেই সরাসরি মানসিক স্বাস্থসেবায় কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। আশা করি মানসিক সমস্যা নিরসনে এ স্বাস্থ্যসেবা আমাদের ভীতি দূর করতে সহায়তা করবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের একজন মনোবিজ্ঞানী আছেন। উনি শিক্ষার্থীদের সেব দিয়ে যাচ্ছেন। আশাকরি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সুবিধা নেবে। এছাড়া বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যাধুনিক মেডিকেল সেন্টার রয়েছে। দুটি অ্যাম্বুলেন্সসহ ২৪ ঘণ্টা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রসঙ্গত প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর পালন হয় বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০