শিশুর অতিরিক্ত জেদ বা রাগ সব অভিভাবকের জন্যই বিব্রতকর। বিষণœতা, ক্লান্তি, একঘেয়েমি ও অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে শিশু জেদি বা অতিরিক্ত রাগী হয়। পারিপার্শ্বিকতা ও বংশগত কারণেও তারা জেদি হয়। কিছু লক্ষণ দেখে বুঝবেন, শিশুসন্তান অতিরিক্ত জেদি হয়ে যাচ্ছে। যেমন কোনো কারণে রেগে গেলেই সবার সঙ্গে, বিশেষ করে অভিভাবকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। অল্পতেই রেগে যায় এবং জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। সহপাঠী বা খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে মারামারি করে। অন্য শিশুরা বদমেজাজি শিশুর সঙ্গে মিশতে চায় না। খুব রেগে গেলে অনেক সময় নিজেই নিজেকে আঘাত করে।
শিশুসন্তান রেগে গেলে নিজেকে শান্ত রাখুন। এতে নিজ থেকেই সে শান্ত হবে বা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। শিশু রেগে গেলে তাকে জড়িয়ে ধরুন, আদর করুন বা কোলে নিন, দেখবেন ম্যাজিকের মতো কাজ হবে এবং শিশুর রাগ তাৎক্ষণিকভাবে কমে যাবে। শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ভালো কাজের প্রশংসা করুন।
পড়ালেখার পাশাপাশি ধর্মীয় আচরণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নিয়ম শেখান। শিশুর শোয়ার ঘরে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস রাখবেন না। বেশিক্ষণ ফোনে যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। ঘুমানো বা খাওয়ার সময় মোবাইল ফোন ও টিভিতে অভ্যস্ত করাবেন না। নিয়মিত খেলতে উৎসাহ দিন। শিশুর সঙ্গে খেলাধুলা করুন, তাদের কোচ হোন। জেদ করে কোনো কিছু দাবি করলে তাকে বুঝিয়ে বলুন, এভাবে জেদ করে নয়, বরং ভালোভাবে চাইতে হয়।
শিশুকে সব সময় বকাঝকা বা তিরস্কার করবেন না। এতে সে আরও খিটখিটে স্বভাবের হয়। শিশুর সামনে তার জেদ নিয়ে অন্য কারও কাছে গল্প করবেন না। শিশুর সঙ্গে চিৎকার করে কখনোই কথা বলবেন না। তাদের সামনে কখনোই ঝগড়াবিবাদ করবেন না।
শিশুদের কোনো সময় চড়-থাপ্পড় মারবেন না। একই কথার পুনরাবৃত্তি করবেন না। প্রয়োজনে হালকা শাসন করুন, ভালো কাজে উৎসাহ দিন এবং ভালো কাজ করলে পুরস্কৃত করুন। অন্যদের সঙ্গে তুলনা করবেন না। সব সময় নিজের সিদ্ধান্ত চাপাবেন না, মিথ্যা কথা তাদের সঙ্গে বলবেন না। তাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন। ভালো ইচ্ছাগুলো পূরণ করুন। বুঝতে দিন তারা আপনার কাছে অনেক মূল্যবান। শিশুর সঙ্গে কথা বলে তার দৈনন্দিন কাজের রুটিন তৈরি করুন। সে কখন খেলবে, কখন পড়বে, কখন স্বাস্থ্যসেবা বিধিমালা শিখবে, কখন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শিখবে প্রভৃতি যেন উল্লেখ থাকে।
ডা. মো. মশিউর রহমান
সহকারী অধ্যাপক, শিশু বিভাগ
এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুর