ইসমাইল আলী: চট্টগ্রামের শিকলবাহায় পিডিবির (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে দুটি। গত অর্থবছর কেন্দ্র দুটিতে নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে ডিজেলচালিত ১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় এক লাখ ৬১ হাজার ইউনিট। তবে সারা বছর কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মীদের বেতন-ভাতা ঠিকই পরিশোধ করতে হয়েছে। এতে কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে পাঁচ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ফলে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ৩৬৮ টাকা ২০ পয়সা।
শিকলবাহার অপর কেন্দ্রটি দ্বৈত (ডিজেল/গ্যাস) জ্বালানিভিত্তিক। তবে ২২৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর গ্যাসের অভাবে ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এ সময় কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় চার লাখ তিন হাজার ইউনিট। যদিও কেন্দ্রটির পেছনে পিডিবির ব্যয় হয় আট কোটি ৮২ লাখ টাকা। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ২১৮ টাকা ৭১ পয়সা।
শিকলবাহার শুধু এ দুই কেন্দ্রই নয়, সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন আরও পাঁচ কেন্দ্রে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ১০৫ টাকার বেশি। এর বাইরে আরও ছয় কেন্দ্রে গত অর্থবছর ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ৬০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। আর চারটি কেন্দ্রে গড় ব্যয় হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় রয়েছে আরও কয়েকটি কেন্দ্রে।
পিডিবির হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনে উচ্চ ব্যয়ের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সংস্থাটির গোপালগঞ্জ পিকিং পাওয়ার কেন্দ্রটি। ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ফার্নেস অয়েলচালিত এ কেন্দ্রটি বছরের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ ছিল। এতে গত অর্থবছর কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ৪১ লাখ ৩২ হাজার ইউনিট। এজন্য ব্যয় করতে হয় ৯০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ফলে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়ে ২১৮ টাকা ৫৮ পয়সা।
এদিকে পিডিবির ডিজেলচালিত রংপুর গ্যাস টারবাইন কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ মেগাওয়াট। এ কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ১৪ লাখ তিন হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য ব্যয় হয় ২১ কোটি ১২ লাখ টাকা। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিটপ্রতি ব্যয় পড়ে ১৫০ টাকা ৪৬ পয়সা।
এগুলোর বাইরে সরকারি নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির বাগেরহাটের মোল্লারহাট ১০৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিতেও উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি ছিল গত অর্থবছর। ফার্নেস অয়েলচালিত এ কেন্দ্রে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় এক কোটি ১৬ লাখ সাত হাজার ইউনিট। এতে মোট ব্যয় হয় ১৪৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ফলে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ১২৭ টাকা ৯৭ পয়সা।
সরকারি এ পাঁচটির বাইরে বেসরকারি দুটি কেন্দ্রেও গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ছিল ১০০ টাকার ওপরে। এর একটি হলো সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীতে স্থাপিত প্যারামাউন্ট বিট্রাক এনার্জি কেন্দ্র। ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ডিজেলচালিত এ কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় দুই কোটি ১৫ লাখ ইউনিট। এজন্য ব্যয় হয় ৩৮৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এতে কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ১৮০ টাকা ৬৭ পয়সা।
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে স্থাপিত বাংলা ট্র্যাকের কেন্দ্রটির সক্ষমতাও ২০০ মেগাওয়াট। এ কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তিন কোটি ৯৬ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয় ৪১৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ফলে কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ১০৫ টাকা ৭২ পয়সা।
উপরি-উল্লিখিত সাত কেন্দ্রের বাইরে বেসরকারি মালিকানাধীন এপিআর এনার্জি (৩০০ মেগাওয়াট) কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় হয় ইউনিটপ্রতি ৮৮ টাকা ৯০ পয়সা, এগ্রিকো (বামণগাঁও) কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় হয় ইউনিটপ্রতি ৭৬ টাকা এক পয়সা, এগ্রিকো (ওরাহাটি) কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় হয় ইউনিটপ্রতি ৬৪ টাকা ১৩ পয়সা। এ তিনটি কেন্দ্রই ডিজেলচালিত।
বেসরকারি মালিকানাধীন ফার্নেস অয়েলচালিত টাঙ্গাইল পল্লী পাওয়ার জেনারেশন কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় হয় ইউনিটপ্রতি ৬৩ টাকা ৫৬ পয়সা এবং সিনহা পিফর এনার্জি কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় হয় ইউনিটপ্রতি ৩৮ টাকা ৬৫ পয়সা। আর খুলনায় নির্মিত বাংলা ট্র্যাকের ডিজেলচালিত দ্বিতীয় ইউনিট কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় হয় ইউনিটপ্রতি ৩১ টাকা ৩৮ পয়সা।
এদিকে পিডিবির সৈয়দপুর গ্যাস টারবাইন (ডিজেলচালিত) কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়ে ৯৫ টাকা ২৬ পয়সা, হাতিয়া ডিজেল জেনারেটর কেন্দ্রটিতে গড় ব্যয় ৬৬ টাকা ৪০ পয়সা। আর ফার্নেস অয়েলচালিত ফরিদপুর পিকিং পাওয়ার প্লান্টে গড় ব্যয় পড়ে ৪৬ টাকা ৭৫ পয়সা এবং বেড়া পিকিং পাওয়ার প্লান্টে ৩২ টাকা ৫৪ পয়সা।