নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘূর্ণিঝড় মোরা বৃষ্টি ঝরিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে গেছে। এর আগে গতকাল সকাল ৬টা থেকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এটি কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। মোরার আঘাতে দুই জেলায় ছয়জনের মৃত্যু হয়।
কক্সবাজারের ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন ও টেকনাফে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। ঝড়ে এসব এলাকায় বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে বহু গাছপালা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী আবদুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড়ে গাছ চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারার পূর্ব ডোমখালীর রহমত উল্লাহ (৫০) ও একই উপজেলার পূর্ব বড়হেউলা ইউনিয়নের সিকদারপাড়ার সায়েরা খাতুন (৬০)। এছাড়া কক্সবাজার পৌরসভার নুনিয়াচটা আশ্রয়কেন্দ্রে আতঙ্কে মারা গেছেন মরিয়ম বেগম (৫৫)। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পেকুয়ারচর গ্রামে সোনালী বাজার স্টেশন থেকে বাড়ি ফিরছিলেন আবদুল হক (৬৫)। পথে গাছ চাপা পড়ে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে রাঙামাটিতে বেলা পৌনে ১২টার দিকে গাছচাপায় দুজন নিহত হন। তারা হলেন শহরের আসামবস্তি এলাকায় হাজেরা বেগম (৪৫) ও শহরের ভেদবেদী এলাকার জাহিদা সুলতানা (১৪)। জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান এ দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে গতকাল মোরা স্থল গভীর নি¤œচাপ আকারে রাঙামাটি ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে। সে সময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (১৭ নম্বর) বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোরা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটি স্থল গভীর নি¤œচাপ আকারে রাঙামাটি ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে আজ রাত ৯টা পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামছুদ্দীন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে নি¤œচাপে পরিণত হবে। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশেই অবস্থান করছে। এটি বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়, তাই আরও বৃষ্টি ঝরিয়ে এটি দুর্বল হবে। ঘূর্ণিঝড়-পূর্ববর্তী আবহাওয়ায় ফিরে যেতে আরও ১০-১২ ঘণ্টা লাগবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া দফতরের কর্তব্যরত আবহাওয়াবিদ আতিকুর রহমান দুপুরে গণমাধ্যমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার। মোরার প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টির সতর্কবার্তাও জারি করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোরার বিপদ কেটে যাওয়ায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় মোরার কারণে গত সোমবার শাহ আমানতে বিমান ওঠানামা বন্ধ ছিল।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার মোহাম্মদ রিয়াজুল কবির জানান, মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করেছেন তারা। ঝড়ে ‘উল্লেখ করার মতো’ তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহন্ত জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত তাদের সব এয়ারফিল্ড বন্ধ ছিল। দুইটার পর খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে এ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সীমানার কিছু অংশ ভেঙে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে।’
নভোএয়ারের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস ম্যানেজার একেএম মাহফুজুল আলম জানান, মঙ্গলবার বেলা ৩টায় ঢাকা থেকে তাদের একটি ফ্লাইট চট্টগ্রামের উদ্দেশে পৌঁছেছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের এজিএম কেএম জাফরুজ্জামান জানান, বেলা ৩টার দিকে তাদের ঢাকা-চট্টগ্রাম-ব্যাংকক ফ্লাইট ছেড়ে গেছে। এছাড়া কলকাতা থেকে একটি ফ্লাইট বেলা ৩টার পর চট্টগ্রামে পৌঁছেছে বলে জানান তিনি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের জিএম শাকিল মেরাজ জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে বিমানের একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা রয়েছে। আরেকটি ফ্লাইট সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে জেদ্দা যাওয়ার কথা।
Add Comment