আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণ

২৯ শিপিং এজেন্ট লাইসেন্স দিতে চায় সরকার

রহমত রহমান: আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণ ও রাজস্ব আহরণে ভূমিকা রাখে শিপিং এজেন্টরা। আমদানি পণ্য দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ এবং রপ্তানি পণ্য বিদেশে পাঠানোর যাবতীয় কাজই শিপিং এজেন্সি সম্পন্ন করে। গত পাঁচ বছরে কেবল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে প্রায় ২৪ লাখ আমদানি চালান ও প্রায় ৬৮ লাখ রপ্তানি চালান শুল্কায়ন হয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত আগমনী জাহাজ ও আইজিএম দাখিলের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় রাজস্ব সহযোগী শিপিং এজেন্টদের সংখ্যা বাড়েনি।

চট্টগ্রামে বর্তমানে ৫৬১টি শিপিং এজেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা আমদানি-রপ্তানির পরিমাণের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। আর গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস মাত্র ৬৮টি শিপিং এজেন্ট লাইসেন্স দিয়েছে। ফি পরিশোধ ও নবায়ন না করায় ১২৯টি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানিতে গতিশীলতা আনতে চলতি বছর ২৯টি শিপিং এজেন্ট লাইসেন্স দিতে চায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। এর আগে শিপিং এজেন্ট লাইসেন্সের প্রয়োজনীয় ও পরিসংখ্যানের তথ্য চেয়ে ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে চিঠি দেয় এনবিআর।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার ও লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের সভাপতি মোহাম্মদ শফি উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের আমদানি-রপ্তানির পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৮৬ হাজার ৫৩৩টি আমদানি চালান এবং ৬৮ লাখ ২৮ হাজার ২৩৬টি রপ্তানি চালান শুল্কায়ন হয়েছে। আগমনী জাহাজের সংখ্যা ও আইজিএম দাখিলের সংখ্যা উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসে মোট ৫৬১টি শিপিং এজেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। যোগ্যতা যাচাই সাপেক্ষে পরীক্ষা নিয়ে নতুন শিপিং এজেন্ট লাইসেন্স দেয়া হলে এই স্টেশনের কার্যক্রমে গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে। কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা অনুসারে নতুন শিপিং এজেন্ট লাইসেন্স প্রদানের জন্য কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমিকে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে পরীক্ষা গ্রহণ ও উত্তীর্ণ প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদানে নির্দেশনা প্রদানের জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।

গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে আমদানি-রপ্তানির পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত পণ্য আমদানিতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়েছে তিন লাখ ৪০ হাজার ৬৪২টি। আমদানি পণ্যের পরিমাণ ছিল আট কোটি ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৫৩৭ মেট্রিক টন, যার মূল্য ছিল তিন লাখ ৬৬ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। আর রপ্তানিতে বিল অব এন্ট্রির পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৩৯ হাজার আটটি। পণ্যের পরিমাণ ছিল ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ৫০৪ মেট্রিক টন, যার মূল্য ছিল ১৬ লাখ ৩৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০২০ সালে আমদানিতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়েছে চার লাখ ৪১ হাজার ৪৬৭টি। আর পণ্য আমদানি হয়েছে ১০ কোটি ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন, যার মূল্য তিন লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। আর রপ্তানিতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়েছে ১৪ লাখ ২৪ হাজার ৮২৪টি। আর পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার ৭০১ মেট্রিক টন, যার মূল্য দুই লাখ ১৪ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা।

আরও বলা হয়, ২০১৯ সালে আমদানিতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়েছে চার লাখ ৮৭ হাজার ৫০৬টি। আর পণ্য আমদানি হয়েছে ৯ কোটি ৭৮ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮ মেট্রিক টন, যার মূল্য চার লাখ ২৩ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। আর রপ্তানিতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়েছে ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪৯০টি। পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৯ মেট্রিক টন, যার মূল্য দুই লাখ ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে আমদানিতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয় চার লাখ ৯৫ হাজার ৩৪৯টি। আর পণ্য আমদানি হয় আট কোটি ৮৯ লাখ ১৭৪ মেট্রিক টন, যার মূল্য চার লাখ ৩০ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। আর রপ্তানিতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়েছে ১৪ লাখ ১৪ হাজার ১৪৬টি। আর পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪০ লাখ ২০ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন, যার মূল্য দুই লাখ ২৪ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে আমদানিতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার ৫০৬টি। আর পণ্য আমদানি হয়েছে সাত কোটি ৯০ লাখ ৯৬ হাজার ৪৯৯ মেট্রিক টন, যার মূল্য তিন লাখ ৬৬ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। আর রপ্তানিতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়েছে ১১ লাখ ৬১ হাজার ৯৯৬টি। আর পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৪১ মেট্রিক টন, যার মূল্য এক লাখ ৯৯ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে আমদানি-রপ্তানি পরিমাণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিপিং এজেন্ট লাইসেন্সের সংখ্যা বাড়েনি। পাঁচ বছরে প্রায় তিন শতাধিক লাইসেন্সের প্রয়োজন থাকলেও দেয়া হয়েছে মাত্র ৬৮টি লাইসেন্স। এর মধ্যে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত নতুন কোনো লাইসেন্স দেয়া হয়নি, বরং লাইসেন্স নবায়নের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় চলতি বছরের জুন মাসে ১২৩টি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আর ২০২০ সালে ১২টি, ২০১৯ সালে ১৭টি, ২০১৮ সালে ২৪টি ও ২০১৭ সালে ১৫টি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বন্দরে মোট জাহাজ এসেছে চার হাজার চারটি। আর বাল্ক জাহাজ এসেছে দুই হাজার ৩৯৯টি। আইজিএম (ইমপোর্ট জেনারেল মেন্যুফেস্ট) দাখিল হয়েছে চার হাজার চারটি। ২০২০ সালে মোট জাহাজ এসেছে চার হাজার ২৬২টি। বাল্ক জাহাজ এসেছে তিন হাজার ৩৩টি। আইজিএম দাখিল হয়েছে চার হাজার ২৬২টি। ২০১৯ সালে মোট জাহাজ এসেছে চার হাজার ৫৪৩টি। বাল্ক জাহাজ এসেছে তিন হাজার ২০২টি। আইজিএম দাখিল করা হয়েছে চার হাজার ৫৪৩টি। ২০১৭ সালে মোট জাহাজ এসেছে তিন হাজার ৮৪৪টি। বাল্ক জাহাজ এসেছে দুই হাজার ৫৫০টি। আইজিএম দাখিল হয়েছে তিন হাজার ৮৪৪টি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০