নিজস্ব প্রতিবেদক: দফায় দফায় সবজির দাম বাড়ার পর এবার রাজধানীর বাজারগুলোয় দাম বেড়েছে সবজি, মুরগি ও তেলের দাম। এর সঙ্গে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। সেইসঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম ও মাছ।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে থেকে বাড়তি ব্রয়লারের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে আরও পাঁচ টাকা করে বেড়েছে। পেঁয়াজের দামও কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা। শিমের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমলেও অন্যান্য বেশিরভাগ সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাজারে এখন বেশিরভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপর। শুধু কচুরমুখি ও পেঁপের কেজি ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে। এ দুটি সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়, যা গত শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ছিল ৪৫ টাকা। এমনকি বৃহস্পতিবারও (৩০ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী হাফিস মোল্লা বলেন, হঠাৎ পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এক দিনে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা। আমার পেঁয়াজ আগে কেনা, তাই ৪৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। আজকে (গতকাল) পেঁয়াজ ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করার সুযোগ নেই।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী নোয়াব আলী বলেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এ কারণে ফরিদপুরের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। তাই আমাদের এখন বাড়তি দামে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সামনে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা ব্রয়লারের কেজি বিক্রি করছেন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা। আর চলতি মাসের শুরুর দিকে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে।
ব্রয়লারের মতো পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম চলতি মাসে দফায় দফায় বেড়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগির দাম কয়েক দফা বেড়ে এখন ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগির দাম নতুন করে বাড়েনি।
মুরগির দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. আল আমিন বলেন, সব ধরনের মুরগির দাম বাড়ায় এখন বাজারে ব্রয়লারের চাহিদা বেশি। তাছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোয় বিক্রি বাড়ায় মুরগির চাহিদা বেড়েছে। এ কারণেই মুরগির দাম বাড়তি।
মুরগির সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। আর মুদি দোকানে একটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১১ টাকায়।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর। এক কেজি গাজর ১২০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে গাজরের দাম কেজিতে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
শীতের আগাম সবজি শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। এ সবজিটির দাম সপ্তাহের ব্যবধানেও অপরিবর্তিত রয়েছে।
এ তিন সবজির সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ঝিঙে, চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়স, পটোল ও করলা। ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, পটোলের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, ঢেঁড়সের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে, বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
শিমের পাশাপাশি বাজারে আসা শীতের আগাম সবজি মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দামও বেশ চড়া। ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।
এছাড়া কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা ও কলমি শাকের আঁটি পাঁচ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী আলী সরদার বলেন, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে সবজিক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে সবজির দাম বাড়তি। তবে ধীরে ধীরে বাজারে শীতের আগাম সবজির সরবরাহ বাড়ছে। তাই আমাদের ধারণা কয়েক দিনের মধ্যে সবজির দাম কিছুটা কমে আসবে।
